অস্ট্রেলিয়া থেকে মাঈনুল ইসলাম নাসিম : বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে পণ্য পরিবহনের ওপর অস্ট্রেলিয়া সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ৬ মাসের মাথায় শিথিল করে নেওয়া হয় কয়েক সপ্তাহ আগে। যদিও দু’দেশের মধ্যকার বিলিয়ন ডলারের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সিংহভাগই সমুদ্রপথে কন্টেইনারে হয়ে থাকে, তথাপি আকাশপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে বেশ ইমেজ সংকটে পড়েছিল বাংলাদেশ। ক্যানবেরাতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে দায়িত্বরত হাইকমিশনার কাজী ইমতিয়াজ হোসেন বললেন, “বিষয়টি আমাদের ইমেজের জন্য মোটেও পজিটিভ ছিলো না”। অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সর্বশেষ আপডেট নিয়ে ৩ জুন শুক্রবার এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলছিলেন হাইকমিশনার।
কাজী ইমতিয়াজ হোসেন জানান, “গত বছরের শেষভাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়ার পর থেকেই আমরা তাঁদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছি, কথা বলেছি, তাঁদেরকে বোঝাবার চেষ্টা করেছি। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থাসমূহ ছিল তার উপর ইউকে’র একটা রিপোর্টের ভিত্তিতে যে নিরাপত্তা ঘাটতির কথা অস্ট্রেলিয়ানরাও বলে আসছিল এবং তারই আলোকে ঐ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তাঁরা। পরে ঢাকায় আমাদের তরফ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় উন্নতি আনা হলে সেই আলোকে আমরা এখানকার কর্তৃপক্ষের সাথে দেনদরবার করে বোঝাতে সক্ষম হই যে, নিষেধাজ্ঞার কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এক্ষেত্রে হাইকমিশনের কন্ট্রিবিউশন তো অবশ্যই রয়েছে, তবে মূল কাজটা সম্পন্ন হয়েছে ঢাকাতেই অর্থাৎ আমাদের বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ঢেলে সাজাবার কারণে”।
পেশাদার কূটনীতিক কাজী ইমতিয়াজ বলেন, “অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক যে বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য প্রতিবছর হয়ে থাকে, তার একটা ছোট অংশ আকাশপথে হয়ে থাকে। ছোট ছোট ব্যক্তিগত চালান বা সেম্পল হিসেবে যেসব জিনিসপত্র আকাশপথে আদান-প্রদান করা হতো, ভলিউম হিসেবে তার ইমপ্যাক্ট সেরকম কিছু না হলেও যেটি আমাদের জন্য খুবই দুশ্চিন্তার বিষয় ছিলো তা হচ্ছে, সিকিউরিটির ব্যাপারে বাংলাদেশকে প্রশ্নের মুখে ফেলার পরিণতিতে তা আমাদের ইমেজের জন্য মোটেও পজিটিভ ছিলো না”। অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমনের ব্যাপারে বিগত দিনে জারি করা সতর্কতা প্রসঙ্গে হাইকমিশনার বলেন, “সিকিউরিটির ইস্যুটি সবসময়ই একটি চলমান প্রক্রিয়া। আন্তর্জাতিক বা আমাদের আভ্যন্তরীণ যে কোন প্রেক্ষাপটেই বলুন, এটার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের চেষ্টা, মনোভাব এবং উদ্যোগ অস্ট্রেলিয়া সরকারের কাছে ইতিমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে”।
বেসরকারি প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে বিশেষ কয়েকটি পেশায় দক্ষ কিছু লোকজনের অস্ট্রেলিয়াতে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ সম্প্রতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান হাইকমিশনার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যেসব এজেন্সি এখানকার বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে দক্ষ জনবল সরবরাহ করে তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতেই এই প্রক্রিয়া এবং তাঁরা তাঁদের ঢাকাস্থ একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রিক্রুটমেন্ট বা সিলেকশনের কাজটি করছে। অবশ্যই তা ঢালাওভাবে নয় এবং সিলেকশনের ঐ সংখ্যাটাও শ’দুয়েকের বেশি নয়।
বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে হলেও মূল রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়ার সাথে ঢাকার কোনও মন্ত্রণালয় বা ক্যানবেরায় বাংলাদেশ মিশন সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। অস্ট্রেলিয়া খুবই স্বচ্ছ একটি জব মার্কেট, যাতে সুনির্দিষ্ট কিছু সেক্টরে টাইম টু টাইম ডিমান্ড সৃষ্টি হয় এবং লোকবলের ঘাটতি দূরীকরণে তখন স্কিল্ড লোকদের মধ্যে যাঁরা শর্তপূরণ করে কোয়ালিফাই হতে পারেন, তাঁদেরই কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়”।
হাইকমিশনার কাজী ইমতিয়াজ হোসেন জানান, “আমাদের হাইকমিশনের একটা বড় ফোকাস এখন হচ্ছে, যেসব ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়াতে লোকবলের ঘাটতি রয়েছে, সেসব জায়গায় আমরা বাংলাদেশ থেকে স্কিল্ড লোকদের সরবরাহ করতে চাই। সুনির্দিষ্ট করে যেমন ওয়েল্ডার, ইলেকট্রিশিয়ান, কার্পেন্টার, টেকনিশিয়ান, প্লাম্বার এসব কাজের জন্য এখানে যেসব কোয়ালিফিকেশনের দরকার হয়, তা পূরণের লক্ষ্যে ঠিক সেভাবে আমাদের জনশক্তিকে তৈরি করা। এজন্য এখানকার ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ‘টেকনিক্যাল এন্ড ফার্দার এডুকেশন’ টেফ-এর সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে একযোগে কাজ করার চেষ্টা করছি আমরা। তাঁদেরকে বাংলাদেশে নিয়ে যেতে চাই আমাদের দেশের লোকদের স্কিল্ড ডেভেলাপ করতে। আশা করছি এই প্রক্রিয়ায় সহসাই আমরা ভালো ফল পাবো এবং বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি অস্ট্রেলিয়াতে আসতে পারবে”।