জাহিবা হোসাইন, মংলা (বাগেরহাট): মংলায় উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা (প্রশিক্ষিকা) আরিফা বেগমসহ ৬টি ইউনিয়নের দলপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অর্থ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৪শ থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেয় আনসার ভিডিপির এই কর্মকর্তা।
ঘুষ নিয়েও অনেককে নির্বাচনীর দায়িত্ব দিতে না পেরে একজনের ঘুষের টাকা ফেরতও দিয়েছেন এই কর্মকর্তা। ঘুষের বিনিময়ে যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তারাও তাদের ঘুষের টাকা ফেরত পেতে গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা আনসার-ভিডিপি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। ঘুষের টাকা ফেরত পেতে ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন ।
ভুক্তভোগী আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা জানান, গত ২২ মার্চ ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৮শ ৬৪ জন আনসার ভিডিপি সদস্যকে নিয়োগ দেন উপজেলা আনসার ভিডিপি’র প্রশিক্ষিকা আরিফা বেগম। নিয়োগকৃত প্রতি সদস্যের কাছ থেকে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা আরিফা বেগম এবং তার ৬ দলপতি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ১৫ দিন আগে থেকে ৪শ থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম ঘুষ নেন। অগ্রিম টাকা দিয়ে ডিউটির তালিকা খাতায় নাম না লেখালে তাদেরকে নেওয়া হবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় আনসার ভিডিপি সদস্যদের। তাই টাকার জন্য ডিউটি করার লোভে বাধ্য হয়েই এ সব সদস্যরা ওই কর্মকর্তার নির্দেশে তার অধিনস্থ ৬ ইউনিয়নের ৬ দলপতির কাছে তারা প্রত্যেকেই এ টাকা জমা দেন।
জমাকৃত এ টাকার অর্ধেক নেন উপজেলা আনসার ভিডিপি প্রশিক্ষিকা আরিফা বেগম আর বাকী টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন ৬ দলপতি বলে অভিযোগ করেছেন আনসার ভিডিপির নারী-পুরুষ সদস্যরা। এদিকে যাদের কাছ থেকে অগ্রিম ঘুষ নিয়েও সময়মত নির্বাচনী দায়িত্ব দিতে পারেননি এমন একজনরে টাকা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদারের মধ্যস্থতায় ফেরত দেন উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আরিফা বেগম ও তার লোকজন।
এছাড়া যাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ডিউটি করিয়েছেন তারা সেই ঘুষের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য বার বার উপজেলা আনসার ভিডিপি কার্যালয়ে গেলেও তাদেরকে নানা ধরনের কথা বার্তা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তাই তারা ঘুষের টাকা ফেরত পেতে উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দারস্থ হলে উপজেলা চেয়ারম্যান আনসার ভিডিপি কর্মকর্তাকে টাকা ফেরত দিতে বলেন। কিন্তু তারপরও তিনি টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। এ নিয়ে আনসার ভিডিপি সদস্যদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্ষুদ্ধ এ সকল সদস্যরা গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় আনসার ভিডিপি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে ঘুষের টাকা ফেরত চাইলেও তাতে কর্নপাত করছেন না ওই কর্মকর্তা ও তার দলপতিরা। যারা টাকা ফেরত চাইছেন তাদেরকে আর আগামীতে নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া হবে না বলেও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আনসার সদস্যরা।
আনসার ভিডিপির সদস্যরা বলেন, প্রত্যেকবার নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োগের সময় এভাবে ঘুষ বাবদ টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকেন দলপতিরা। আবার অনেক সদস্য আগামীতে ডিউটি পাওয়ার আশায় ঘুষের টাকা দিয়েও বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। এদিকে গত ২২ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা আনসার ভিডিপি সদস্যদের সোমবার ভাতার টাকা ১৬শ২০ ও ১৭শ ৫০ (টাকা শ্রেণিভেদে) দেওয়ার সময় মূলত ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। সরকার প্রদত্ত এ ডিউটি ভাতা (১৬শ ২০টাকা ও ১৭শ ৫০ টাকা) নেওয়ার সময় সদস্যরা তাদের অগ্রিম দেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত চাইলে আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আরিফা বেগম বলেন, সেই টাকা পদ্মা সেতু বাবদ কেটে রাখা হয়েছে। এছাড়া ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আরিফা বেগম আরো বলেন, আমি কোনও টাকা নেইনি। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। টাকা নিলেও তা ৬ ইউনিয়ন দলপতিরা নিয়ে থাকতে পারেন। টাকা পয়সা নেওয়ার বিষয়টি আমিও বিভিন্নভাবে শুনেছি এবং জানতে পেরেছি বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে আনসার-ভিডিপির চিলা ইউনিয়ন দলপতি/কমান্ডার ইউনুস শেখের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দলপতিরা কোনও টাকা পয়সা নেই নাই। তিনি এ প্রতিনিধিকে আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট করবেন না, আমরা ম্যাডামের সাথে কথা বলে বিষয়টি মিটমাট করে ফেলব। ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে আনসার সদস্য আফসার শেখ, মো: শহীদ, আবুল বাসার হাওলাদার, দীপংকর মন্ডল, ফিরোজা বেগম, পারভীন বেগম, তহমিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কাছ থেকে ইউনিয়ন দলপতি/কমান্ডাররা নির্বাচনের আগে ৪শ থেকে ৭শ টাকা করে নিয়েছে। টাকা দিতে না চাইলে তারা বলেন, তাহলে ডিউটি করতে পারবা না। টাকা ফেরতের বিষয়ে তখন তারা বলেছিল এ টাকা ডিউটির টাকা দেওয়ার সময় ঠিক করে দেব। কিন্তু এখন শুধু ডিউটির টাকা দিচ্ছে তাই আমরা কেউ ডিউটির টাকাও নেই নাই। আমাদের আগের টাকা ও ডিউটির টাকা একসাথে চাই। তারা আরো বলেন, এভাবে প্রতি বছরই আমাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়, টাকা না দিলে আমাদের ডিউটি করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার বলেন, আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আরিফা বেগম সকল আনসার ভিডিপি সদস্যদের কাছ থেকে ৪শ থেকে ৭শ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন বলে সদস্যরা আমাকে জানিয়েছেন। আমি জানামাত্র আনসার ভিডিপি কর্মকর্তাকে ডেকে শোনার পর তিনি একজনের টাকা ফেরত দিয়েছেন।