জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সোনাইখালী গ্রামে আজ মঙ্গলবার সকালে আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী নন্দ (৭০) নামে এক পুরোহিতকে জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
করাতিপাড়া গ্রামের মৃত সত্য গোপাল গাঙ্গুলীর ছেলে আনন্দ গোপাল নলডাঙ্গা সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন ।
হত্যাকাণ্ডের ছয় ঘণ্টার মধ্যে জঙ্গি সংগঠন আইএস তাকে হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে।
আনন্দ গোপালকে নিয়ে ১৯ ঘন্টার মাথায় ঝিনাইদহে তিনজন খুন হলেন।
সোমবার হরিণাকুন্ডুর দারিয়াপুর গ্রামে প্রকাশ্যে আলফাজ উদ্দীন ও হরিণাকুন্ডুর ক্লিনিক মালিক নজরুলকে আলমডাঙ্গার তিওরবিলা মাঠে গুলি ও জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
আনন্দ গোপালের হত্যার পর ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসা খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনার সাথে নিঃসন্দেহে জঙ্গি সংগঠন জড়িত।
নিহতের ছেলে দীনবন্ধু গাঙ্গুলী জানান, তার বাবা মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে বাড়ি থেকে নলডাঙ্গা সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের উদ্দেশে বের হন। মহিষাডাঙ্গা বিলের মধ্যে পৌঁছালে রাস্তার উপর কে বা কারা তাকে জবাই করে হত্যা করে। তারা বাবার কোন শত্রু ছিল না বলে ছেলে জানান।
আনন্দ গোপালের ভাইপো অরুণ গাঙ্গুলী জানান, তার কাকা এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিল। এক মোটরসাইকেলে তিনজন এসে আকস্মিকভাবে তার কাকাকে হত্যা করেছে বলে তিনি শুনেছেন।
নিহতের প্রতিবেশী ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ জানান, প্রতিদিন তিনি বাইসাইকেল চালিয়ে নলডাঙ্গা মন্দিরে পূজা করতে যেতেন। এ রকম একজন ভালো মানুষকে হত্যা করা অন্যায় বলে আব্দুর রশিদ মনে করেন।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকাল ৯.৩০ টার দিকে পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী নন্দ মন্দিরে যাচ্ছিলেন। বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে মহিষের ভাগাড় বিলের মধ্যে পৌঁছালে তিনজন হেলমেট পরিহিত মোটরসাইকেল আরোহী তার গতি রোধ করে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। আঘাতের পর তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এসআই মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী নন্দের হাত, মাথা, ঘাড়, গলাসহ বিভিন্ন স্থানে ধারোল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
পুরোহিত হত্যার খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার, পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান ও ঝিনাইদহ র্যাবসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে আসেন।
মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি এ সময় সাংবাদিকদের জানান, যারা স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। তিনি বলেন এর আগে খ্রিস্টান চিকিৎসক সমির খাজা ও শিয়া মতাবলম্বী হোমিও চিকিৎসক কালীগঞ্জের আব্দুর রাজ্জাক হত্যার সাথে এ ঘটনার মিল রয়েছে।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, পুরোহিতকে কে বা করা হত্যা করেছে তাৎক্ষণিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে এ ঘটনার পর গোটা জেলার বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের অভিযান শুরু হয়েছে। তিনি আশা করেন খুব দ্রুতই হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।