হায়দার হোসেন, গোপালগঞ্জ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে গোপালগঞ্জের ৯টি গ্রামের ৫শ ৪০টি পরিবার হাঁস পালন করে দরিদ্রতাকে জয় করে এখন স্বাবলম্বী। তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এ প্রকল্পের আওতায় তারা হাঁস পালনের পাশাপাশি বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি, ফল চাষ ও গাভী পালন করে আয়বৃদ্ধি করছেন।
জলাভূমিবেষ্টিত গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া ইউনিয়নের অনেক জমি সারাবছর অনাবাদি থাকে। বছরের পর বছর জমি অনাবাদি থাকায় পশ্চাদপদ গ্রামবাসী দরিদ্রতার মধ্যে বসবাস করতো। তাদের দারিদ্র্য বিমোচনে প্রধানমন্ত্রীর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় ওই ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৯টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করা হয়। প্রত্যেক সমিতির সদস্য সংখ্যা ৬০ জন। এর মধ্যে নারী ৪০ জন ও পুরুষ ২০ জন। প্রত্যেক সদস্য মাসে ২শ টাকা করে সঞ্চয় জমা করেন। সরকার উৎসাহ বোনাস হিসেবে প্রত্যেক সদস্যকে সঞ্চয়ের সমপরিমান প্রদান করে। কাজুলিয়ার ৯টি সমিতিতে সদস্য সঞ্চয়, উৎসাহ বোনাস ও ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল মিলে মোট তহবিল হয় ৫৪ লাখ টাকা। এ টাকা থেকে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সদস্যদের চাহিদা মোতাবেক ঋণ প্রদান করা হয়। ঋণের টাকায় হাঁস কিনে উম্মুক্ত বিলে ছেড়ে পালন করে কাজুলিয়া ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির ৫শ ৪০টি পরিবার এখন সাবলম্বী।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সাফল্য প্রদর্শনের জন্য ৯ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলার সদর উপজেলায় কাজুলিয়া ইউনিয়নের পিঠাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হাঁস সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ওই মাঠে অন্তত ১০ হাজার হাঁস প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান।
সুফলভোগী পিঠাবাড়ী গ্রামের দেবু প্রসাদ চৌধূরী ও রমা মল্লিক বলেন, আমাদের এলাকার জমি সারা বছর অনাবাদি থাকে। এখানে কোন ফসল হয় না। অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প আমদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ঋণ দিয়েছে। ঋণের টাকায় হাঁস কিনে বিলে ছেড়ে দিয়েছি। বিল থেকে খাবার খেয়ে হাঁস ডিম দিচ্ছে। এই ডিম বিক্রি করেই আমাদের সংসারে স্বাচ্ছন্দ ফিরেছে। হাঁসের পাশাপাশি এখন উঠানে সবজি, ফলের চাষ ও গাভী পালন করে অতিরিক্ত আয় করছি। এখন আর দরিদ্রতা নেই। ছেলে মেয়েকে স্কুলে দিতে পারছি। তাদের পছন্দমত পোষাক পেিরচ্ছেদ দিতেও সমস্য হচ্ছে না।
পিঠাবাড়ি গ্রামের বিজলী বালা, উজ্জল কুমার বালা, নাজমা বেগম, স্মৃতি বিশ্বাস ও সীমা বিশ্বাস জানান, জমিতে ফসল না হলেও এ এলাকার লোকজন হাঁস চাষ করে ভালই আছেন। কষ্টের মধ্যেও তারা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন, অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। তবে অনেকেই ঋণের পরিমান বাড়ানোসহ ঋণের সুদ মওকুফের আবেদন জানিয়েছেন।
হাঁস পালনের মধ্য দিয়ে দেশের ডিম ও আমিষের চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে মনে করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আতাউর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, হাঁস খামারীদের উৎসাহিত করতেই মূলতঃ এই হাঁস সমাবেশের মতো একটি ব্যতিক্রম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
কাজুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাখন লাল দাস বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প আমার ইউনিয়নের গরিব পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমরা এ ধারা অব্যাহত রাখব। হাঁস চাষ সম্প্রসারিত করব। তিনি আরও বলেন, হাঁস পালনে এখানে কোন খরচ নেই। হাঁস বিল থেকে খাবার খেয়ে ডিম দেয়। এ ধরনের হাঁস চাষ খুবই লাভজনক। তাই এ এলাকার মানুষ এ পদ্ধতিতে হাঁস চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। দিন দিন হাঁস পালন সম্প্রসারিত করলে তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার আরো উন্নতি হবে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জালালউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, কাজুলিয়ার হাঁস চাষে দারিদ্র্য বিমোচন মডেল সারাদেশের বিলবেষ্টিত এলাকায় ছড়িয়ে দিতে পারলে দারিদ্যবিমোচন করা সম্ভব। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জে হাঁস পালনে সাফল্য এসেছে। এ জেলার কাজুলিয়া ইউনিয়নের ৫শ ৪০টি পরিবার হাঁস পালন করে দরিদ্রতাকে জয় করেছে। উন্নয়নের মূলধারায় এ জনগোষ্ঠীকে সামিল করা সম্ভব হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা কাজ করে যাব।