অঘোষিত কর্মবিরতি, বন্ধ হয়ে গেছে কুয়াকাটা হাসপাতাল

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): ডাক্তার ও কর্মীদের অঘোষিত কর্মবিরতিতে গত তিন দিন ধরে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা হাসপাতালের সব চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে। এতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে।

সোমবার কেরোসিন চুলা বিস্ফোরণে দগ্ধ নয়াপাড়া গ্রামের জাকির ফকিরের ছেলে বশার ফকিরের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে রোগীর স্বজনরা একজন ডাক্তারকে লাঞ্ছিত করার পর এরকম অবস্থা তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, আহত বশারকে কুয়াকাটা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে ডাক্তাররা  দীর্ঘ সময় রোগীকে অপেক্ষা করিয়ে পরবর্তীতে চিকিৎসা করাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. কামরুজ্জামানকে লাঞ্ছিত করে।

পরে কুয়াকাটা হাসপাতাল থেকে  ঢাকায় নেওয়ার পথে বশার মারা যায়। ক্ষিপ্ত স্বজনদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে ডা. কামরুজ্জামান মহীপুর থানায় বশারের বাবা জাকির ফকিরকে আসামি করে সোমবার একটি মামলা দায়ের করেন। তারপর তিনি ছুটিতে চলে যান।

এ ঘটনার পর থেকে অঘোষিতভাবে কুয়াকাটা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালের গেট অধিকাংশ সময় তালা মেরে  রাখা হচ্ছে। ফলে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ফিরে যেতে হচ্ছে।

জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন ডাক্তার সোমবার রাতে কুয়াকাটা হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন। তারা কুয়াকাটা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. কামরুজ্জামানকে ছুটিতে যাওয়ার পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবার প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা কুয়াকাটা হাসপাতালে অবস্থান করেও কোনো রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেখা যায়নি। মম্বিপাড়া গ্রামের আসমত আলী তার সাড়ে তিন বছরের নাতনি সুফিয়াকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসলেও চিকিৎসা না নিয়েই তাদের ফিরে যেতে হয়। পায়ে আঘাত নিয়ে শহিদুল ইসলাম (৩৫), জ্বর নিয়ে আলমগীর হোসেন (৪৮), পেটের ব্যথা নিয়ে আকলিমা বেগম (৩৩), মাথায় আঘাত নিয়ে আনোয়ার হোসেন (৪০) কুয়াকাটা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলেও চিকিৎসা ছাড়াই তাদের ফিরে যেতে হয়েছে।

এ ব্যাপারে ডা. কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, কুয়াকাটা হাসপাতালে বার্ন রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকলেও আমি বার্ন রোগীকে দেখতে যাওয়ার সময় আমার ওপর হামলা হয়েছে। কলাপাড়া হাসপাতালের ডাক্তারদের পরামর্শে ছুটিতে রয়েছেন কি না এরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তিন দিনের ছুটিতে আছি। শুক্রবার পর্যন্ত আমি ছুটিতে থাকব।

অন্যদিকে নিহত বশারের বাবা জাকির ফকির ডাক্তারের উপর হামলা কিংবা তাকে লাঞ্ছিত করার কথা অস্বীকার করে বলেন, তার সঙ্গে শুধু কথা কাটাকাটি হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মান্নান জানান, ডাক্তার কামরুজ্জামান তিনদিনের ছুটিতে আছেন। তবে কর্মবিরতির কথা অস্বীকার করে বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় ইনডোরে চিকিৎসা বন্ধ আছে। ডাক্তার পোস্টিং না হওয়ায় আপাতত জরুরি বিভাগ বন্ধ রয়েছে।

মহিপুর থানার ওসি মাকসুদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, রোগীর স্বজনদের হামলার ঘটনায় ডা. কামরুজ্জামান একটি মামলা করেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.