জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ: ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিহত জঙ্গি নিবরাস ইসলামের সঙ্গে ঝিনাইদহের একটি মেসে থাকা বাকি সাত যুবককে নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধে উঠেছে। এই সাত যুবক কারা, কী উদ্দেশ্যে তারা ঝিনাইহে ছিলেন, কী তাদের পরিচয় এবং এখন তারা কোথায় আছেন এমন হাজারো প্রশ্ন মানুষের মনে উঁকি দিচ্ছে।
নানা কৌতূহল ও প্রশ্নের পাশাপাশি ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে ঝিনাইদহে অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চারটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড নিয়ে। সন্দেহের তীর এখন আইএস থেকে দায় স্বীকার করা চাঞ্চল্যকর ঝিনাইদহের এ সব হত্যার সঙ্গে নিবরাস ইসলাম জড়িত কি না।
তবে ঝিনাইদহ পুলিশের কাছে এমন তথ্য আছে কি না তা জানা যায়নি।
ঝিনাইদহ শহরের হামদহ এলাকার সোনালীপাড়ার ভাড়া ছাত্রাবাসে থাকাকালে নিবরাস যে মোটরসাইকেলটি চালাতেন তাতে প্রায়শই তিনজনকে চলাচল করতে দেখেছেন স্থানীয়রা। আর পুরোহিত আনন্দ গোপাল ও সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস হত্যাকাণ্ডে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে খুনিরা। খ্রিস্টান হোমিও ডাক্তার সমির খাজা ও আব্দুর রাজ্জাক হত্যার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় এসব হত্যায় মোটরসাইকেল ব্যবহার হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।
নিবরাসের ঝিনাইদহে অবস্থানকালে সংঘটিত আলোচিত কয়েকটি হত্যা নিয়ে নতুন করে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। নিবরাস ঠিক কত দিন ঝিনাইদহের ওই বাড়িতে ছিলেন, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাড়ির মালিকের স্ত্রী বিলকিস নাহারের দাবি, আনুমানিক চার মাস আগে নিবরাস আসেন। ২৮ জুন চলে যান। আর ফুটবল খেলার সঙ্গী স্থানীয় তরুণেরা বলেছেন, মাসখানেক তাদের সঙ্গে নিবরাস খেলেছেন। তবে সেটা কোন মাস, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ঢাকার গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে, নিবরাস ও তার সঙ্গীরা ঝিনাইদহে ছিলেন ৩ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত। এরপর তিনি ৫ জুন থেকে বগুড়ায় ছিলেন। ২৫ জুন ঢাকায় আসেন। গুলশানে হামলার পর নিবরাসের পরিবার বলেছে, নিবরাস ৩ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হন। ৫ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। তাতে নিবরাসসহ তিন তরুণ নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জঙ্গিদের মেসের একজন পরিচারিকা জানান, তিনি প্রতিদিন তিনবেলা এসে চারজনের রান্না করে দিতেন। কিন্তু থাকতেন আটজন। বাকি চারজন বলতেন তারা বাইরে থেকে খেয়ে আসেন। বেশির ভাগ সময় ভাতের সঙ্গে আলু ভর্তা, ডিম আর ডাল রান্না করতেন। মেসে একটি মোটরসাইকেল থাকত। ছদ্মনাম সাঈদ (নিবরাস) বেশির ভাগ সময় মোটরসাইকেলে বাইরে যেতেন বলে জানান তিনি।
মোটরসাইকেলে অচেনা ঝিনাইদহ শহরে নিবরাস ওরফে সাঈদ কোথায় যেতেন, কী করতেন এমন তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নেই। বাড়ির মালিক কাওছার আলীর ভাই তাহের আলী জানান, তারা পাঁচ ভাই। তিনিসহ তিন ভাই আওয়ামী লীগের সক্রিয় সমর্থক। কাওছারসহ দুই ভাই সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। তারা কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন।
এদিকে ঝিনাইদহের পুলিশ বিভিন্ন সময় জানিয়ে আসছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালুহাটী গ্রামের বেলেখাল বাজারে খ্রিস্টান হোমিও চিকিৎসক সমির বিশ্বাস ওরফে সমির খাজা, কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা এলাকার শিয়া সম্প্রদায়ের হোমিও চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাক, সদর উপজেলার করোতিপাড়া গ্রামের পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী ও সদরের উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামের রাধামদন মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস হত্যার মোটিভ ও ক্লু উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
এসব হত্যার ব্যাপারে আইএস দায় স্বীকার করে বিবৃতি প্রচার করে। কিন্তুু নিহতদের স্বজনদের ভাষ্যমতে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে জনসম্মুখে আনা ও আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি না দেওয়ায় তারাও রয়েছেন অন্ধকারে।
অন্যদিকে পরিচয় গোপন করে সাঈদ নাম নিয়ে নিবরাস তিনিসহ ঝিনাইদহ শহরে আট জঙ্গির বাসা ভাড়া নেওয়ার খবর শুক্রবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হওয়ার বিষয়ে ঝিনাইদহ পুলিশের কোনো কর্মকর্তা মুখ খুলতে চাননি। তারা বিষয়টি জানেন না বলে আগে থেকেই জানিয়ে আসছেন।
আবার বাড়ির মালিক সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট কাওছার আলী মোল্লার স্ত্রী বিলকিস নাহার শুক্রবার জনসম্মুখে আসেননি।
শুক্রবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা বিলকিস নাহারের বক্তব্য নিতে তার বাড়ি গেলে তিনি তাতে সাড়া দেননি। অথচ আগের দিন বিলকিস নাহার অনেক কথাই মিডিয়াকর্মীদের কাছে বলেছিলেন।