জাহিবা হোসাইন, মোংলা (বাগেরহাট): সুন্দরবনের খালগুলোতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে অবাধে মাছ শিকার। কয়েকজন অসাধু বন কর্মকর্তার যোগসাজশে অবৈধভাবে মাছ শিকার করায় মাছের প্রজনন কেন্দ্র ধ্বংসের পাশাপাশি জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অভিযোগ উঠেছে, জোংড়া ও মরা পশুর ক্যাম্পের দুই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জেলেদের কাছ থেকে মাসিক হারে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা খালে মাছ ধরার সুযোগ করে দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের মধ্যে থাকা ১৮টি খালে মাছ শিকারসহ সব ধরনের বনজ ও জলজ সম্পদ আহরণে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বন বিভাগের কিছু অসৎ কর্মকর্তা জেলেদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা খালগুলোতে তাদের মাছ শিকারের সুযোগ করে দিচ্ছেন। বনের নিষিদ্ধ ঝাপসি খালে চিলার সাবেক ইউপি মেম্বার জামালের ছয়টি ঘাট রয়েছে। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে এবং বিভিন্ন দস্যু বাহিনীর প্রভাব খাটিয়ে চলতি মৌসুমে জামাল এসব ঘাট নিজের দখলে নেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে ও এক মহাজন জানান, মরা পশুর খালে আউয়াল, জিয়ার, জোংড়া খালে কামরুল, শাহাদাৎ ও নশের এবং আন্ধারিয়া খালের মাছ শিকার করে আসছে সিন্দুরতলার সামাদ।
আন্ধারিয়া খালে জোংড়ার ওসির তত্ত্বাবধানে মাছ ধরেন সামাদ। সামাদ ওই খালে অবৈধভাবে মাছ ধরে যে টাকা পান, তার অর্ধেক তিনি নেন আর বাকি টাকা জোংড়ার ওসিকে দেন বলে অভিযোগ তাদের। এ ছাড়া অন্য জেলেরাও জোংড়া ও মরা পশুর ক্যাম্পের ওসির সঙ্গে মাসিক চুক্তিতে মাছ ধরে থাকেন। তবে জোংড়ার ওসি অতি অর্থের লোভে এখন শুধু তার লোকজন দিয়েই, বিশেষ করে সামাদকে দিয়ে মাছ শিকার করাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিদেরও। এ ছাড়া জোংড়ার ওসি মোবারক চিলার জয়মণি এলাকার সাবেক ইউপি মেম্বার ইউনুসের মেয়েজামাই হওয়ায় স্থানীয়ভাবে একটু বেশি দাপট খাটিয়ে চলছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জোংড়া ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন জানান, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত এসব অভিযোগ সঠিক নয়। এর আগে সুন্দরবনের অভ্যন্তরের খালে অবৈধ জাল-নৌকা থাকলেও এখন তা নেই বলে দাবি তার। তিনি বলেন, ‘যখন কারো স্বার্থে বেঘাত ঘটে, তখন তারা এভাবে মিথ্যা অভিযোগ ছড়িয়ে থাকেন।’
খালে মাছ শিকারের বিষয়ে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি রোববার সারা দিন ওই এলাকায় ছিলাম। এ বিষয়ে আমরা খুবই কঠোর অবস্থানে রয়েছি, আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউই নিষেধাজ্ঞা জারি করা খালে মাছ শিকার ও অবৈধ কোনো কাজ করতে পারবে না। কেউ যদি এসব করার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের ধরে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।