ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে কাবিননামায় স্বাক্ষর গ্রহণ, প্রবাসীর মামলায় দিনাজপুরে ওসিকে প্রত্যাহার

রতন সিং, দিনাজপুর: বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কানাডার এক নাগরিককে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এক মহিলাকে বিয়ে করেছেন মর্মে জোর করে কাবিননামায় স্বাক্ষর নেওয়া ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) দিনাজপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল হোসেন মামলাটির বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

ওসির বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে আদেশের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর নির্দেশও দেন বিচারক।

কানাডার নাগরিক ঢাকার পল্লবীর বাসিন্দা তারিক আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে খানসামা থানার ওসি কৃষ্ণ সরকারসহ ১০ জনকে আসামি করে বুধবার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা করেন। বিচারক মামলাটি গ্রহণ করে পরদিন আদেশের সময় ধার্য করেন।

এদিকে ওসির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বুধবার পুলিশ সদর দপ্তর ও বিভাগীয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয় জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষ। বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ ওই ওসিকে প্রত্যাহার করে লালমনিরহাট পুলিশ লাইনে নিয়ে গেছে।

মামলার অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত তারিক আব্দুল্লাহ ২০০৪ সাল থেকে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। কয়েকমাস আগে তিনি দিনাজপুরে আসেন। তখন তার আত্মীয় খানসামা উপজেলার পাকেরহাট এলাকার আব্দুল জব্বার মিয়া তার মেয়ে রাহানা জান্নাতের সাথে তারিক আব্দুল্লাহর বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু এ প্রস্তাবে তারিক রাজি হননি।

২৮ জুলাই আব্দুল জব্বার মিয়া, এনামুল হক, এহছান্নুল্লাহ, একরামুল, মাজেদা বেগমসহ কয়েকজন তারিক আব্দুল্লাহকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আটকে রেখে জান্নাতকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়। বিষয়টি ফোনে খানসামা থানার ওসি কৃষ্ণ কুমার সরকারকে জানানো হলে পুলিশ তারিকসহ অন্যদের থানায় নিয়ে আসে। এ নিয়ে থানায় বৈঠক বসানো হয়। বৈঠকে তারিককে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ওসি অন্যান্যদের সহযোগিতায় জোরপূর্বক বিবাহ নিবন্ধনের বালামে তারিকের স্বাক্ষর নেন। এছাড়া ওসি কৃষ্ণ কুমার ‘উদ্ধার করার জন্য’ তারিকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এসব অভিযোগ এনে তারিক আব্দুল্লাহ ওসিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।

তারিকের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম জানান, যেহেতু ওসি কৃষ্ণ কুমার সরকার একজন সরকারি কর্মচারী তাই তার বিরুদ্ধে মামলা আমলে নিতে সরকারি অনুমতি প্রয়োজন। তাই আদেশের কপি বৃহস্পতিবার দুপুরে ডাকযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আসামিদের বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল তদন্তের আদেশ প্রদান করা হয়েছে।

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন জানান, ওসি কৃষ্ণ সরকারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে বুধবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরকে অবহিত করা হয়। বুধবার রাতেই রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির নির্দেশে দিনাজপুর জেলার খানসামা থানা থেকে প্রত্যাহার করে লালমনিরহাট জেলায় বদলি করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.