রবিউল হাসান রবিন, কাউখালী (পিরোজপুর): বৃদ্ধ বাবা আশরাফ আলী সরদার আর মা হাসিনা বেগমের একমাত্র অবলম্বন মেধাবী কলেজ ছাত্র মো. রহমাতুল্লাহর অকালমৃত্যু পরিবারটির যত্নে লালিত স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। অতিদরিদ্র সংসারের অনেক প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে অনার্সে ভর্তি হয়ে ফাইনাল পরীক্ষার জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। অভাবী বাবা-মায়ের কষ্ট কিছুটা ঘোচাতে লেখাপড়ার পাশপাশি রহমত ক’দিন আগে একটি বিদেশি একটি কোম্পানির বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ প্রকল্পে শ্রমিকের কাজ নেয়। কাজ করতে গিয়ে টাওয়ার থেকে ছিটকে পড়ে সে গুরুতর আহত হয়। সোমবার সকালে লাশ হয়ে বাড়ি ফেরে রহমত।
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার সয়না রঘুনাথপুর ইউয়নের হোগল গ্রামের বৃদ্ধ দম্পতির একমাত্র সন্তান মো. রহমাতুল্লাহ (২৩) ৩ আগস্ট কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় এনার্জিপ্যাক পাওয়ার কোম্পানির সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে আহত হন। ঈদের পর থেকে সে সেখানে টানা কাজ করছিল।
বৈদ্যুতিক টাওয়ার থেকে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার পর সোমবার ঢাকায় মহাখালীতে মেট্রোপটিান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রহমত। মঙ্গলবার ভোরে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের সহায়তায় রহমতের মৃতদেহ কাউখালীর হোগলা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে পরিবারের শোকার্ত স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মা হাসিনা বেগম একমাত্র ছেলের এমন মৃত্যুতে বিলাপ করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছেন। রহমাতুল্লাহর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকাহত গ্রামবাসী বাড়িতে ভিড় করেন।
সোমবার আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের উদ্যোগে মুগদাপাড়ায় প্রথম জানাজা ও মঙ্গলবার দুপুরে গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয়দফা জানাজা শেষে রহমহতকে পারিবারিক কবরস্তানে দাফন করা হয় ।
রহমাতুল্লাহর বাবা আশরাফ আলী সরদার বিলাপ করে বলেন, ‘একটা মাত্র পোলা। হে মাবুদ তুমি হেরেও অকালে নিয়া গেলা। অহন আমরা কারে নিয়া বাঁচমু। আমাগো কে দেখবে।’
কাউখালী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ও সমাজসেবক আব্দুল লতিফ খসরু জানান, অভাবের সংসারে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে লেখাপড়ার পাশপাশি পেটের তাগিদে কাজের সন্ধানে যায় রহমত। মেধাবী রহমত পিরোজপুর সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজে ইংরেজি বিষয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিল। সম্প্রতি সে বিয়ে করে। স্ত্রী জায়েদা আক্তার লিজা কাউখালী মহাবিদ্যালয়ে বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবা আশরাফ আলী গ্রাম-গঞ্জে মাটির হাড়ি-পাতিল ফেরি করে সংসার চালান।
এ ব্যাপারে সয়না রঘুনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাইদ মনু জানান, রহমাতুল্লাহ পরিবারের একমাত্র সন্তান। সে মেধাবী ও কর্মঠ ছিল। দরিদ্র একটি পরিবারের একমাত্র সন্তানের এমন করুণ মৃত্যুতে পরিবারে বৃদ্ধ বাবা ও মাকে দেখার আর কেউ রইল না।