খুলনা প্রতিনিধি: খুলনার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে অপহরণ করা ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা আবুল কাসেম কালাকে তিন দিনেও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। গত বুধবার দুপুরে একটি হত্যা মামলায় হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার পথে একটি মাইক্রোবাসে কালো কাপড় পরিয়ে তাকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে খুলনা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে অভিযোগপত্রটি জিডি হিসেবে গ্রহণ করে। বিএনপি নেতা আবুল কাসেম কালাকে উদ্ধারের দাবিতে শুক্রবার খুলনার রূপসা উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামবাসী খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। মানববন্ধনে কয়েকশ’ নারী-পূরুষ অংশ গ্রহণ করে।

সংবাদ সম্মেলনে রূপসার ৫নং ঘাটভোগ ইউপির ৪নং ওয়ার্ড সদস্য ও বিএনপি নেতা আবুল কাসেম কালার স্ত্রী রূপালী বেগম বলেন, গত বুধবার সকাল ১০টার সময় আমার স্বামী আবুল কাসেম কালা এবং আমার দেবর ২১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ মোল্যা হাজিরা শেষে আদালত থেকে বের হন। আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে চায়ের দোকানে চা খাবার উদ্দেশ্যে দাঁড়ালে একটি মাইক্রোবাসে করে আবুল কাসেম কালাকে তুলে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমি ভগ্নিপতি মোঃ হালিম মোল্যার কাছ থেকে জানতে পারি সন্ত্রাসী তুহিন মোড়ল আমার স্বামীর নাম ধরে ডাক দেয়। আবুল কাসেম কালা তার ডাকে আইনজীবী সমিতির উত্তর দিকে গেলে, আগে থেকে সেখানে রাখা কালো মাইক্রোবাসে উক্ত তুহিন মোড়ল, জুলফিকার মোড়ল, সাইফুল ইসলাম তুহিন ও রুমান কাজীসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জন এবং মাইক্রবাসের পাশে মোটর সাইকেলে আরো অজ্ঞাতনামা দুইজন আবুল কাসেমের (কালা) মুখ চেপে ধরে মাইক্রোবাসে উঠানোর চেষ্টা করে। এসময় তাদের সাথে কালার ধস্তাধস্তি হয় এবং সে ডাক চিৎকারের চেষ্টা করে। তার ধস্তাধস্তির শব্দে ইনামূল শেখ, নজরুল মোল্যা, আরিফুল মোল্যা ও মিন্টু শেখসহ আরো অনেকে মাইক্রোবাসের কাছে যাওয়ার আগেই মাইক্রোবাসটি আবুল কাসেম কালাকে নিয়া দ্রুত দক্ষিণ দিকে চলে যায়।
এরপর অপর একটি সূত্রে জানতে পারি উল্লেখিত ব্যক্তিরা প্রশাসনের সহায়তায় আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে। ঘটনার সত্যতা যাচাই করার জন্য আমরা র্যাব, পুলিশের গোয়েন্দা শাখাসহ প্রশাসনের বিভিন্নস্থানে খোঁজ খবর নেই। কিন্তু তার কোন সন্ধান পাইনি। ঘটনার পরের দিন খুলনা থানায় গিয়ে ভগ্নিপতি মোঃ হালিম মোল্যা বাদী হয়ে অপহরণ মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ আবেদনটি জিডি আকারে গ্রহণ করে। খুলনা থানার জিডি নং ৬৫৪ তারিখ ১১/০৮/১৬ইং।
তিনি আরও বলেন, মোতালেব মোড়ল হত্যা (দায়রা ৩১৬/১৫ নং) মামলায় হাজিরা দেওয়ার জন্য আমার স্বামী আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিলো। এ মামলার বাদী জুলফিকার মোড়ল। তার যোগসাজসে উক্ত আবুল কাসেম কালাকে অপহরণ করা হয়েছে এবং তাকে জীবনে শেষ করে দিতে পারে বলে আমারা আশংকা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, মোতালেব মোড়ল হত্যাকে পুঁজি করে তার ছেলে সাইফুল ইসলাম তুহিন ব্যাপক অর্থ বাণিজ্য করেছে। নিরীহ গ্রামবাসীকে মামলায় জড়ানোর হুমকি এবং চার্জশীট থেকে নাম বাদ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অনেক টাকা নিলেও তাদেরকে চার্জশীট থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। বরং অনেকের নামে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। অনেককে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখানো হচ্ছে।
২০১৩ সালের ১৮নভেম্বর জমাজমি নিয়ে বিরোধের কারণে প্রতিপক্ষের ৭/৮জন দিনের বেলায় মোতালেব মোড়লকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার দুই দিন পর নিহতের ভাই জুলফিকার মোড়ল বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৬/৭জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করে। এর পরপরই শুরু হয় ব্যাপক অর্থ বাণিজ্য।
মুক্তিযোদ্ধা মুজিবর শেখের কাছে সাইফুল ইসলাম তুহিন ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল। তিনি টাকা না দেওয়ায় তার দুই ছেলে জুবায়ের শেখ ও খালাদ শেখকে এ মামলায় আসামি করা হয়। মোতালেব মোড়ল মারা যাওয়ার পর গৃহবধূ নাজমুন নাহারের স্বামী মিরান মোল্লা নিজের বাগানের বাঁশ কেটে কবর দেয়। পরে মিরান মোল্লাকেই আসামি করা হয়েছে। তার কাছে মামলার চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলে মামলার বাদী জুলফিকার মোড়ল ৫০ হাজার টাকা নিলেও মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়নি।
সাইফুল ইসলাম তুহিনের বিরুদ্ধে হত্যা ও প্রতারণার মামলা রয়েছে। ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল তেরখাদা ছাগলাদাহ বাজারে চা বিক্রেতা অলিয়ার রহমান কাজীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সাইফুল ইসলাম তুহিন এ হত্যা মামলার ১১ নম্বর আসামি। এছাড়া তুহিনের বিরুদ্ধে মহানগর অতিরিক্ত যুগ্ম-দায়রা জজ প্রথম আদালতে এন আই এ্যাক্টের ১৩৮ ধারার মামলা নং ২৯৫৫/১৩, ২৩৮৩/১৩, ৪০৬১/১৩, ১০৯/১২, ১৫১/১২, ৫৯৯/১০, মামলা বিচারাধীন রয়েছে।