একেএম কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ: নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের একযুগ পরেও শেষ হয়নি নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ। উদ্বোধনের পর প্রায় দীর্ঘ একযুগ পার হলেও মহাসড়কটি নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষোভ দানা বাঁধছে স্থানীয়দের মধ্যে। তাছাড়া মহাসড়কটি নির্মাণের জন্য সে সময়ে ৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও মাটি ভরাট আর কাঁচা রাস্তা ছাড়া কিছুই হয়নি প্রকল্পের। ঠিকাদারের গাফিলতি আর দুর্নীতির কারণে ভেস্তে যায় প্রকল্পটি।
এদিকে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারো নতুন করে নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কটি হাতে নিয়েছে। মোট ৪৮ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর নাটোরে এক সফরে সাবেক প্রধামন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নাটোর-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। সে সময় নওগাঁ এবং নাটোর সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর প্রায় এক’শ কোটি টাকা ব্যয় ধরে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করে। সে সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তা বিবেচনা করে একনেকের এক বৈঠকে ৫০ কোটি টাকা প্রকল্প অনুমোদন করে। পরে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৪৮ কিলোমিটার নওগাঁ-নাটোর মহাসড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ওই প্রকল্পের আওতায় ২০০৮-০৯ অর্থবছরের মধ্যে মহাসড়কে মাটি ভরাট, সড়ক প্রশস্তকরণ, ব্রীজ, কালভার্ট নির্মাণের কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বরাদ্দকৃর্ত অর্থে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দেওয়া নক্সার বাইরে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের মনগড়া নিয়মে মাটি ভরাট ও প্রশস্তকরণের কাজ শেষ করে।
আজও ব্রীজ, কালভার্ট নির্মাণ করা হয়নি। এতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ নিয়ে সে সময় নানা প্রশ্ন তোলে স্থানীয়রা। এমনকি কাজ না করেই অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন সময়ে মন্ত্রণারয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে নওগঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আঞ্চলিক মহাসড়কটির কোথাও কোন অস্তিত্ব নেই। কিছু কিছু জায়গা দখল করে স্থানীয়রা বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেছে। সড়কের মাঝখানে অনেকে কলা, পেঁপেঁর বাগান তৈরি ও সবজি চাষও করছে। গরু ছাগলের আস্তানায় পরিণত হয়েছে সড়কটি।
নওগাঁর আত্রাই অঞ্চলের মানুষ সময়মত ট্রেন না পেলে রেল লাইনের ধার দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আবার পায়ে হেঁটে যাতায়াত করলেও এ সড়কের কোথাও ব্রীজ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভ্যান, সাইকেল ও মোটর সাইকেল নিয়ে রেলওয়ে ব্রীজ পারাপার হতে হয়। স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক বছরে এভাবে রেলওয়ে ব্রীজ পারাপার হতে গিয়ে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সাহাগোলা গ্রামের মোঃ আবু জাহিদ ডালিম জানান, সড়কটিতে যানবাহন ও চলাচলের উপযোগী না হওয়ায় নাটোর, বীরকুৎসা, মাধনগর, আত্রাই, সাহাগোলা, রাণীনগর এলাকার জনসাধারণকে নাটোর ও রাজশাহী অঞ্চলে আবার নাটোর, মাধনগর, নলডাঙ্গা এলাকার জনসাধারণকে যাতায়াত করতে হয় বাগমারা উপজেলার শিকদারী ভাগনদী-শ্রীপতিপাড়া হয়ে নলডাঙ্গা থানার চেউখালী হয়ে ৪০ কিলোমিটার অতিরিক্ত রাস্তা ঘুরে।
আত্রাই, সাহাগোলা, রাণীনগর এলাকার জনসাধারণ আত্রাই সিংড়া, নাটোর হয়ে ৩৬কিলোমিটার অতিরিক্ত রাস্তা ঘুরে এ কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য,ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা উন্নয়ন কাজেও পিছিয়ে পড়েছে এখানকার মানুষ। পরিবেশ সামাজিক সচেতন নিয়ে কাজ করা স্থানীয় সংগঠন আস্থা শিশুও মহিলা উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক রওশন আরা পারভীন শিলা বলেন, নওগাঁ থেকে নাটোর পর্যন্ত সড়কটি নির্মাণ করা হলে আন্তঃজেলার সাথে যোগাযোগ উন্নয়ন সম্ভব হবে। তা ছাড়া নওগাঁ-নাটোর ১০০কিলোমিটার দূরত্ব কমে আসবে। অপর দিকে ট্রেনের ওপর চাপ কমে যাবে। সেইসাথে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিনজ্য সম্প্রসারণ ও যোগাযোগের উন্নয়ন হবে। অথচ এই সড়কটি নির্মাণ না করায় এ অঞ্চলটি অবহেলিত ও উন্নয়নবঞ্চিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেট বক্তৃতায় নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম সংসদে বলেন, নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কটি ২০০১ সালে সর্বপ্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। সে সময় আঞ্চলিক মহাসড়কটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৭২ কোটি টাকা। এরপর প্রকল্পটির ব্যয়ভার বৃদ্ধি পেয়ে ১৭২ কোটি টাকায় এসে দাড়ায়। এরপর ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও কোনও কাজ না করেই ৭২ কোটি টাকা খরচ হয়ে যায় । কিন্তু আজও এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি বাস্তবে রূপ পায়নি। মহাসড়কটি নিয়ে ১১বার সংসদে উপস্থাপন করার পরেও প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। এ সময় সংসদ সদস্য বলেন, জোট সরকারের সময় প্রকল্প ঘিরে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি হওয়ার কারণে এটি বাস্তবায়ন হয়নি।
মহাসড়কটি নির্মাণ হলে ছয় জেলার মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন হবে। এবং ঢাকার সাথে এই অঞ্চলের মানুষের ৬০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে আসবে। নাটোর সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জিকরুল ইসলাম বলেন, নাটোর-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কটি নির্মাণের জন্য ১৯৩ কোটির একটি প্রকল্প সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন হলেই আঞ্চলিক সড়কটির কাজ আবার শুরু করা হবে। জিকরুল ইসলাম আরো বলেন, নাটোর-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের নাটোর অংশের ৬ কিলোমিটারের জন্য ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ছোট-বড় তিনটি ব্রীজ রয়েছে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আন্ত:জেলার মধ্যে যোগাযোগের এক মাইল সৃষ্টি হবে।