রবিউল হাসান রবিন, কাউখালী (পিরোজপুর): সমাজে কোন কোন মানুষ নিভৃত জনপদে থেকেও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। আব্দুল লতিফ খসরু সে রকম একজন উদ্যোক্তা মানুষ। তাঁর নেশা তথ্যচিত্র সংগ্রহ করা। তথ্যচিত্র সাজিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন সমাজ ও রাষ্ট্রের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি সমৃদ্ধ তথ্যব্যাংক। তিনি এসব করে আনন্দ ও তৃপ্তি পান বলে জানান।
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার কেউন্দিয়া গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে ষাটোর্ধ্ব আব্দুল লতিফ খসরু ২০০৪ সালে কাউখালী উপজেলা শহরের উত্তর বন্দরে নিজ ভবনে একটি তথ্য সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করেন। তার স্বপ্ন নতুন প্রজন্ম তথা এলাকার মানুষকে অজানা তথ্য জানানো। প্রতিদিন শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সের দর্শনার্থীর ভীড় জমে এ সংগ্রহশালায়।
সংগ্রহশালায় রয়েছে দেশ বিদেশের বিখ্যাত ছবি, রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, এ জনপদের শিল্প সংস্কৃতি ও সংবাদ সযতেœ সংগ্রহ করে সংরক্ষিত করে রেখেছেন সংগ্রহশালায়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত এসব তথ্যচিত্র এলাকার মানুষের কাজে লাগছে। তার এ সংগ্রহশালা নিয়ে এ পর্যন্ত ৫০টি প্রদর্শনী করেছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এ সংগ্রহশালা জেলা ও উপজেলার জনপদের তথ্য সম্পদ হিসেবে কাজে লাগবে এমন ধারণা থেকেই এ সংগ্রহশালা গড়ে তোলেন তিনি।
দীর্ঘ একযুগ ধরে তিনি এ কাজটি করছেন। তার সংগ্রহশালায় রয়েছে এ জনপদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আলোকচিত্র, পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ জনপদের সংবাদ ও প্রতিবেদনের কাটিং বিভিন্ন কর্মসূচির আলোকচিত্র পরিসংখ্যানগত তথ্য। জেলা এবং উপজেলার জনপদের কোনো তথ্য কারো প্রয়োজন হলে ছুটে যান আদুল লতিফ খসরুর প্রতিষ্ঠিত সংগ্রহশালায়। সেখানে রয়েছে ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ভাষা সৈনিকদের জীবনীভিত্তিক তথ্যচিত্র। এতে রয়েছে এ উপজেলায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের তথ্যচিত্র। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বহস্তে লেখা চিঠির ফটোকপি। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাদের নামের তালিকা। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর পরাজয় দলিলের তথ্যচিত্র, রয়েছে রানা প্লাজা, বিডিআর বিদ্রোহসহ নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের তথ্যচিত্র, সিডরে ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্লভ তথ্যচিত্র, রয়েছে রূপসী বাংলার অনেক চিত্র। সংগ্রহশালায় প্রায় পাঁচ শতাধিক তথ্যচিত্র রয়েছে।
এ সংগ্রহশালায় প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী আসে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে এ সংগ্রহশালা। এ সংগ্রহশালায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে।
অর্থনৈতিক সংকটের কারনে ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও অনেক দুর্লভ চিত্র সংগ্রহ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি। সরকারের তরফ থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও উৎসাহিত হবেন এ উদ্যোক্তা। এ সংগ্রহক এলাকার মানুষের কাছে একজন তথ্য ব্যাংকার হিসেবে পরিচিত। এলাকার শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা মানুষের মিলনক্ষেত্র হিসেবে কাজ করছে এ সংগ্রহশালাটি।
আজও অনেক দর্শনার্থী দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দুর্লভ তথ্যচিত্র দেখতে এখানে আসেন। তাই সংগ্রহশালাটি কাউখালীর গর্বের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
কাউখালীর বিশিষ্ট সংস্কৃতিকজন সুব্রত রায় জানান, সত্যিকারের একজন মানুষ হতে হলে অনেক কিছু জানতে হয়। আর এ জানার ব্যবস্থা করেছেন কাউখালীর আবদুল লতিফ খসরু। তার এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।