জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহামায়া গ্রামের তুহিন রেজা (২৩) নামে এক যুবককে মালয়েশিয়ায় আটকে রেখে দফায় দফায় তার পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত তুহিনের পরিবার দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়েছেন।
তারপরও নির্যাতন থেমে নেই। বিপুল পরিমান দাবিকৃত অর্থ না পেয়ে তুহিন রেজার দুই পা এবং এক হাত ভেঙে তিন তলা বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে থানা পুলিশের দারস্থ হওয়ার পর দালাল চক্রটি স্ব-পরিবারে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের মহামায়া গ্রামের ব্রীজ পাড়ার ইসলাম উদ্দীনের ছেলে তুহিন রেজা বিদেশ যাওয়ার জন্য এলাকার একাধিক দালাল চক্রের খপ্পরে পড়েন।
২০১১ সালে লিবিয়া যাওয়ার জন্য মহামায়া ও বেজিমারা গ্রামের কয়েকজন দালালের সাথে চুক্তি করে। একই বছরের মার্চ মাসে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করে তুহিন। দুই বছর ধরে ঘোরানোর পর দালালরা জানান, লিবিয়ার আবস্থা ভাল নয়। সাড়ে ৪ লাখ টাকা হলে ইরাক বা কাতারে পাঠানো হবে। এরপর ফ্লাইটের নামে তুহিনকে দফায় দফায় ১৬ বার ঢাকায় নিয়ে রাখা হয়।
সর্বশেষ একই খরচে তুহিনকে গত ১৪ জুলাই মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর দালালচক্র তুহিনকে আটকে রেখে পরিবারের কাছে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। দাবিকৃত টাকা না পেয়ে ভিনদেশে তুহিনকে দফায় দফায় নির্যাতন করা হচ্ছে।
কোন উপায় না পেয়ে তুহিনের দরিদ্র বাবা গরু ও মাঠের জমি বিক্রি করে দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করেন। ততক্ষণে টাকা আদায়ের জন্য নির্যাতন করে তুহিনের দুই পা এবং একহাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
এরপর তুহিনের নিকট আরো দশ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে না পারাই তিন তলা বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছে। এই ঘটনায় তুহিনের পিতা ইসলাম উদ্দীন বাদি হয়ে মহামায়া গ্রামের মধু, আসাদ, বজিমারা গ্রামের মাহফুজুর রহমান ওরফে পল্টু ও তোরাব আলিকে আসামি করে ঝিনাইদহ সদর থানায় অভিযোগ করেছেন।
তুহিনের মা রোকেয়া খাতুন জানান, তুহিন রেজাকে ভাল চাকরি দেওয়ার কথা বলে মহামায়া গ্রামের আসাদ, মধু, বেজিমারা গ্রামের তোরাব আলি, মাহফুজ ওরফে পল্টু তার ছেলের পিছু লাগে। ছেলের আগ্রহ আর দালালের কথা বিশ্বাস করে বিদেশ পাঠাতে রাজি হই। এখন টাকা দিতে দেরি হওয়ায় দুই পা আর বাম হাত ভেঙে দিয়েছে তারা।
তিনি আরো জানান, ঢাকার দালাল ফরিদপুরের শহিদুল ইসলাম ও সদর উপজেলার কুঠিদূর্গাপুর গ্রামের মতিন ওরফে মতি দালাল তার ছেলেকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা চালায়। বর্তমান মালেয়েশিয়ায় তার এক আতœীয়ের নিকট ছেলে তুহিন চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে রোকেয়া খাতুন জানান।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার উপদরিদর্শক আশোক কুমার জানান, এই ঘটনায় মহামায়া গ্রামের মধু, আসাদ এবং বেজিমারা গ্রামের মাহফুজুর রহমান ওরফে পল্টু ও তোরাফ আলিকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দাখিল করেছেন। যা আমারা তদন্ত করে দেখছি। সত্যতা পেলে মামলা হিসাবে গ্রহণ করা হবে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, ঝিনাইদহে বিদেশে মানুষ পাঠানোর নামে গোটা জেলায় একাধিক দালাল চক্র গড়ে উঠেছে। চক্রটি গ্রামের সহজ সরল মানুষকে বিদেশে ভাল চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে কোট কোটি টাকা আদায় করছে।
আদালত, থানা পুলিশ ও এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে বিদেশে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাতের হাজারো অভিযোগ জমা পড়ছে। কিšু‘ টাকা পাচ্ছে না প্রতারিত মানুষগুলো।