রবিউল হাসান রবিন, কাউখালী (পিরোজপুর): পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক এনামুল হক হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পার হলেও এর বিচার কাজে কোনো অগ্রগতি নেই। নিহত যুবলীগ নেতার পরিবার বিচার নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। ওই মামলায় পুলিশের অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি পাওয়া আসামি ছরোয়ার হোসেন আদালত থেকে অব্যাহতি না পাওয়ায় হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমের উপর স্থাগিতাদেশ দিয়েছিলেন। এ কারণে মামলার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বিলম্ব হচ্ছে।
তবে মামলার বাদির দাবি হাইকোর্টের দেওয়া মামলার কার্যক্রম স্থাগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে মামলার বিচার কাজে এত বিলম্ব হওয়ার কথা নয়।
যুবলীগ নেতা এনামুল হককে ২০১৩ সালের ২০ আগস্ট বিকালে কাউখালীর বেকুটিয়া গ্রামের নতুনবাজার-বিজয়নগর-কাউখালী সড়কের শেখবাড়ি মসজিদের কাছে গ্রামের সড়কের ওপর একদল সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত যুবলীগ নেতা এনামুল উপজেলার বেকুটিয়া গ্রামের হামিদ হাওলাদারের মেঝ ছেলে। পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ডের পর নিহত যুবলীগ নেতা এনামুল হকের ছোটভাই এমাদুল হক বাদি হয়ে ২০১৩ সালের ২২ আগস্ট কাউখালী থানায় বেকুটিয়া গ্রামের মোফাক্ষের আলীর ছেলে মো. মামুন শেখকে প্রধান আসামি করে ১৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে কাউখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
থানা সূত্রে জানা গেছে, হত্যা মামলাটি তদন্ত শেষে কাউখালী থানার ১৬ জন আসামির মধ্যে পুলিশ মামুন শেখ, ফিরোজ শেখ, বাবুল মল্লিক, মো. এনামুল মীর, মিজান শেখ, মো. রঞ্জু শেখ, কাইউম শেখ, মোঃ বশির শেখ, মানিক হাওলাদার, কামাল পারভেজ ওরফে কামাল গাজীকে অভিযুক্ত করে এবং ৬জন আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে গত ২০১৪ সালের ৩০ আগষ্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
মামলার অভিযোগ থেকে পুলিশের অব্যাহতি দেওয়া আসামিরা হলো জাকির তালুকদার, দুলাল শেখ, জাকির মল্লিক, ছরোয়ার হোসেন হাওলাদার, হুমায়ন হাওলাদার ও ইসমাইল হোসেন মধু।
মামলার বাদি নিহত যুবলীগ নেতা এনামুল হকের ছোট ভাই এমাদুল হক জানান, মামলার দায় থেকে ৬ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় পুলিশের দেওয়া চার্জশিট প্রত্যাখ্যান করে তিনি আদালতে নারাজির আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন পিরোজপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল বাশার মিঞা মামলার দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী মাসুমা হক ও আবদুল লতিফ খানের আদালতের নিকট প্রদত্ত জবানবন্দিতে অব্যাহতিদানের সুপারিশকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ অভিযোগ থাকায় বাদীর নারাজির আবেদন মঞ্জুর করেন। কাউখালী থানার অভিযোগ নং-৩৪ তারিখ ৩২/৮/২০১৪ অনুযায়ী অব্যাহতি সুপারিশকৃত আসামিসহ সকল আসামিদের অপরাধ বিচারার্থে আমলে নেন। সেই সাথে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে পলাতকদের গ্রেফতার করা গেল কি-না, সে সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তাগিদ দেন।
এদিকে মামলাটি নানা আইনী জটিলতায় পড়ে তিন বছর পার হয়। ফলে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি নিয়ে নিহত যুবলীগ নেতার পরিবার হতাশার মধ্যে পড়েছেন।
এ বিষয়ে পিরোজপুর পাবলিক প্রসিকিউটর খান আলাউদ্দিন বলেন, মামলার বিচার কাজ বিলম্ব হওয়ার বিষয়ে আদালতের কোনো হাত নেই। আসামিদের হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ চেয়ে দায়ের করা মামলার কারণেই বিচার কাজে কিছুটা বিলম্ব ঘটছে। তবে তিনি জানান, মামলাটির বিচার কাজ দ্রুত সম্পন্ন হওয়া প্রক্রিয়াধীন।