বাবুল সরদার, বাগেরহাট: প্রবল বর্ষণ এবং নদ-নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের ফলে উপকূলীয় বাগেরহাট জেলার কমপক্ষে দেড়’শ প্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকালে বাড়ি থেকে বের হবার সময় পানিতে পড়ে কচুয়ার বাধাল ইউনিয়নের বিলকুল গ্রামের মোসলেম উদ্দিন নকিবের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৭০) মারা গেছেন।
চিতলমারী, রামপাল, কচুয়া, মংলা, মোড়েলগঞ্জ, ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও বাগেরহাট সদর উপজেলার দুই হাজারের অধিক পুকুর ও চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। এতে অন্তত ৫’শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে চাষিদের সূত্রে জানা গেছে। মৎস্য চাষিরা হাপিত্যেশ করছেন। বাগেরহাট, মোড়েলগঞ্জ ও মংলা পৌরসভাসহ জেলার নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
এসব স্থানে সরকারি-বেসরকারি অফিস, রাস্তা-ঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-মাদ্রাসা, বাড়িঘর, বীজতলা, পানবরজ ও ফসলের ক্ষেত জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শহরের রাস্তায়ও জমেছে পানি। অনেক পরিবারের রান্না-বান্না বন্ধ হয়ে গেছে। বসতঘরে পানি উঠে ফ্রিজ-টিভিসহ দামি আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে।
গত দুই দিনের ঝড়ে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে এবং লাইনে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে অনেকস্থানে। ঘরের উপর গাছ চাপা পড়ে স্বুল ছাত্রী আরবী আক্তার, বিথি আক্তার, চিংড়ি চাষি দেবাষিশ বিশ্বাসসহ ৪ জন আহত হয়েছে।
মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুও চরম কষ্টের মধ্যে পড়েছে। এসব এলাকায় পানীয়-জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
স্লুইজগেটগুলো দিয়ে ঠিকমত পানি ওঠা-নামা না করা, সরকারি খালগুলো ভরাট ও দখল হওয়া এবং পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি সরতে পরছে না। ফলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এদিকে জেলার প্রতিটি নদ-নদীতে তীব্র স্রোত ও অস্বাভাবিক পানি বেড়েছে। বলেশ্বর, পানগুছি, চিত্রা, ভৈরব, মধুমতি নদীর ভাঙন বেড়েছে। প্রবল বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারে জেলার কমপক্ষে ১২ টি স্থানে বেড়িবাঁধ ও সড়কে ধস/ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, টানা ভারী বর্ষণে জেলার ৯টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মাছের খামার, আমনের বীজতলা, পানের বরাজ পানিতে তলিয়ে এবং গাছ পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে বলা হয়েছে।