খুলনা প্রতিনিধি: কখনও ঝিরঝির আবর কখনও মুষলধারে চলছে অবিরাম বৃষ্টি। মহানগরী খুলনার সব রাস্তা তলিয়ে গেছে। তার সাথে বয়ে যাচ্ছে মাঝে মধ্যে দমকা ঝড়ো হাওয়া। এমতাবস্থায় খুলনার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চলতি বছরে একদিনে এতো বৃষ্টি আর কোনো দিন হয়নি। সারা দিন সূর্যের মুখ দেখা মেলেনি। ঘন মেঘ আর অন্ধকারে ঢেকে যায় মাঝে মধ্যে। ঘন মেঘ কাটতে মুহুর্তে নেমে আসে মুষল ধারে বৃষ্টি। যত বৃষ্টি হয় ২ ঘণ্টা পরে খুলনা শহরের পানি নেমে যায়। কিন্তু রোববার ছিল ব্যতিক্রম। সারা দিন বৃষ্টি আর বৈরি আবহাওয়ার কারণে গোটা শহর স্তব্ধ হয়ে যায়।
দুপুরের পর শহরে যানচলাচল কমে যায়। বিকেলে দু’একটি রিক্সা, মহেন্দ্র, ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক আর প্রাইভেট চলাচল করলেও তা ছিল রিজার্ভ। অর্থাৎ অফিস ফেরত মানুষ পড়ে মহাবিপাকে। সন্ধ্যার পর বলতে গেলে যানচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের পর থেকে নগরীর মার্কেটগুলো বন্ধ হয়ে যায়। আর সারা দিন নিম্ন আয়ের ফুটপাতের দোকানগুলো খুলতে পারেনি। নগরীর একাধিক এলাকার দোকানপাট পানিতে তলিয়ে যায়। নিম্নাঞ্চলের পাকা-আধাপাকা ঘর তলিয়ে যায়। অনেক বাড়িতে দুপুরে ও রাতে খাবার রান্না করা সম্ভব হয় নি। পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে শত শত দোকান পাট ও ব্যবসা কেন্দ্রের নিত্য পণ্য।
আজ সোমবার সকালে বৃষ্টি কমতে পারে এমন আভাষ দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
জেলার কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, দাকোপ ও রূপসার কয়েকশ’ ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে, হুমকির মুখে বেড়িবাঁধ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের হাজারো পরিবার।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রোববার (২১ আগস্ট) ভোর ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ১৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি অব্যাহত ছিল।
খুলনা মহানগরীর বাইতি পাড়া, তালতলা, শান্তিধাম মোড়, সিটি কলেজ, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, রয়্যালের মোড়, পিকচার প্যালেসের মোড়, পিটিআই মোড়, সাতরাস্তার মোড়, শামসুর রহমান রোড, নিরালা, বাগমারা, মিস্ত্রিপাড়া, ময়লা পোতা, শিববাড়ী মোড়, বড়বাজার, মির্জাপুর রোড, খানজাহান আলী রোড, খালিশপুর, দৌলতপুর, নতুনবাজার, পশ্চিম রূপসা, আহসান আহমেদ রোড, দোলখোলা, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, বাবুখান রোড, নিরালা আবাসিক এলাকা, সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার পশ্চিম পাশ, রায়েরমহল, কেএমপি পুলিশ লাইন, বাস্তুহারা কলোনী, মুজগুন্নী আবাসিক এলাকা, দেয়ানা, পাবলাসহ নগরীর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সদ্য গড়ে ওঠা শহরতলীর বাড়িগুলো বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। এ সব স্থানের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (নৌ.) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, খুলনা থেকে মংলা যাওয়া-আসার পথে দেখেছি প্রবল বর্ষণের কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে মাছের ঘের, ফসল ও কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় যাত্রীদেরও চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
ডুমুরিয়া এলাকার সেলিম জানান, অতি বর্ষণে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সবজি খেতের।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, রোববার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত স্থলচাপের কারণে ১৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মংলা সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত জারি করা রয়েছে। খুলনা ও বরিশাল নদী বন্দরের জন্য ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রোববার রাতভরও বৃষ্টি হবে। সোমবার (২২ আগস্ট) সকাল নাগাদ বৃষ্টি কমতে পারে।