খুলনায় কোরবানির পশু সঙ্কট এবার বাড়ার আশংকা

খুলনা প্রতিনিধি: মহানগরী খুলনার লবনচরা এলাকার খামারি দম্পতি খাদিজা বেগম ও সেকেন্দার আলী। গত বছর পাঁচটি গরু লালন-পালন করেছিলেন কোরবানি উপলক্ষে। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় এবছর সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিনটিতে। শুধু এই দম্পত্তিই নন, তাদের মতো অনেক খামারি এবছর কম সংখ্যক পশু প্রতিপালন করছেন। ফলে খুলনা জেলায় এবার কোরবানির সময় প্রায় ৪০ শতাংশ পশুর সঙ্কট দেখা দিতে পারে।

Qorbani-21
কোরবানির পশুর হাট।                        -ফাইল ছবি

পরপর দু’বছর পশুর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক খামারি এবার ষাঁড় ও বলদ লালন-পালন করছেন না। চাহিদা মেটাতে পার্শ¦বর্তী জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা গরু আমদানি করবেন বলে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা আশাবাদী। এছাড়া কেউ যাতে ক্ষতিকারক স্টেরয়েড ওষুধ দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণ করতে না পারেন সেদিকে কড়া নজর রয়েছে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের।

খুলনা মেট্রো থানা ও ৯ উপজেলায় পারিবারিক খামারসহ মোট ৭ হাজার ৭২৪টি খামারে ২১ হাজার ৪০২টি ষাঁড় ও ২ হাজার ৬৮৮টি বলদ মিলে মোট ২৪ হাজার ৯০টি গরু মোটাতাজাকরণের কাজ চলছে। কিন্তু গেলো বছর খুলনা জেলায় গরু কোরবানী হয়েছিল ৩৮ হাজার ৬৫২টি। সে হিসাবে এবছর চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৬০ শতাংশ গরু উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া গত বছর জেলায় যেখানে ৫৯ হাজার ১২৫টি ছাগল/ভেড়া জবাই হয়েছিল এবার সেখানে জেলাব্যাপী ছাগল/ভেড়া পালন হচ্ছে মাত্র ৭ হাজার ৮৫৩টি। এখানেও রয়েছে বড় অংকের তারতম্য। এমন পরিস্থিতিতে এবারের কোরবানিতে পশু সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে খুলনার মানুষ।

এ প্রসঙ্গে খুলনার আড়ংঘাটার মধ্যপাড়া এলাকার এসএস আলী এ্যাগ্রো গরুর খামারের স্বত্ত্বাধিকারী শেখ সামিউর রহমান জানান, তাঁর খামারে ৫৫টি গরু মোটাতাজাকরণের কাজ চলছে। কিন্তু চলতি বছরে ঘাষ উৎপাদন কম, দানাদার খাবারের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি ও উন্নতজাতের বাছুর না পাওয়ায় বছরের শুরু থেকেই হিমসিম খাচ্ছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ঈদের আগ মুহূর্তে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গরু ঢুকে পড়ায় ২০১৪ ও ২০১৫ সালে খামারিরা আশানুরূপ দাম পাননি। তাই লোকসান এড়াতে এবছর গরু লালন-পালনের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন অনেকে।

খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ অরুণ কান্তি মন্ডল বলেন, নিরাপদ গো-মাংস নিশ্চিত করতে খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝানো হচ্ছে স্টেরয়েড ওষুধ দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণ করা হলে কি ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন খামারিরা। এছাড়া আইনের দিকটাও তিনি উল্লেখ করেন।

অপরদিকে খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সৈয়দ মোঃ আনোয়ার উল ইলসাম জানান, খুলনা বিভাগীয় শহর হওয়াতে এখানে সব সময় কোরবানির গশুর চাহিদা একটু বেশি থাকে যার পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার, কিন্তু সেই তুলনায় পশু উৎপাদন হয়না। এছাড়া কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জেলার একটা বড় অংশ জুড়ে লবনাক্ততা ও চিংড়ির ঘের থাকায় সেখানে গরু উৎপাদন করা কখনও সম্ভব হয়না। তাই প্রতি বছরই খুলনায় কোরবানির পশুর সঙ্কট থাকে। তবে এবছর সে সঙ্কটটা একটু বেশি। তারপরও তিনি আশাবাদী যে বিগত বছরগুলোর মতো বাগেরহাট, নড়াইল, সাতক্ষীরা, যশোর, গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে খুলনার হাট-বাজারগুলো ব্যবসায়ীরা পশু এনে এ অঞ্চলের মানুষের চাহিদা পূরণ করবে।

আনোয়ার উল ইলসাম আরও বলেন, অন্যদেশ থেকে গরু আমদানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকলে এবং খামারিরা এবছর যদি ভালো মূল্য পায় তাহলে আগামীতে বেশি বেশি পশু পালনে উদ্যোগী হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.