আব্দুল্লাহ আবু এহসান, মধুপুর (টাঙ্গাইল): ৪৮ বছরেও মধুপুর বন গবেষণা কেন্দ্রের তেমন কোনও সফলতা নেই। নেই তেমন কোনো গবেষণা কার্যক্রম। বসে বসে বেতন নিচ্ছেন ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী। কর্মকর্তাদের অবহেলা আর ভূমি খেকোদের লোভে গবেষণা কেন্দ্র ইতিমধ্যেই ৪শ’ একর জমি হারিয়েছে। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে বন গবেষণা কেন্দ্র। হারিয়ে যাওয়া জমিতে আবাদ হচ্ছে বিষাক্ত আনারস, কলা আর বিদেশি প্রজাতির গাছ।
দিন দুপুরে চুরি হচ্ছে এই গবেষণা কেন্দ্রের বড় বড় গাছগুলো। দেখার যেন কেউ নেই। গত ১৫ আগষ্ট ডেপুটি রেঞ্জার ছুটিতে থাকাকালীন গবেষণা কেন্দ্রের আঙিনা থেকে ৫০/৬০ সেপ্টি পরিমাপের একটি বড় কাঁঠাল গাছ চুরি হয়েছে। কর্মকর্তা ছুটি থেকে এসে দায়সারা জিডি করেই ক্ষ্যান্ত হয়েছেন। এ সব তথ্য এলাকাবাসী ও গবেষণা কেন্দ্রের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
তারা জানান, বনের সমৃদ্ধ প্রজাতি উন্নয়নের জন্য টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকার চাড়ালজানিতে ১৯৬৮ সালে মধুপুর বন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল নিয়োগ করা হয়। দীর্ঘদিন এখানে বৈজ্ঞানিক বা গবেষণা কার্যক্রম না থাকায় বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে তৎকালীন সময়েই বদলী করে নেওয়া হয়। তারপর আর কোনও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়নি। ফলে ঝিমিয়ে পড়ে গবেষণা কার্যক্রম। বর্তমানে এ গবেষণা কেন্দ্রে ৮ জন কর্মকর্তা- কর্মচারী রয়েছে। গবেষণা কার্যক্রম চালানোর জন্য চাড়ালজানি ভিটর টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে মনোরম পরিবেশে চাড়ালজানি মৌজায় ৪শ’ ২৫ একর জমি প্রদান করা হয়।
নব্বই দশকে সামান্য কিছু আকাশমনি, মিনজিয়াম, ম্যালেরিয়াসহ কয়েকটি বিদেশি প্রজাতির গাছের গবেষণা করা হলেও তারপর অদ্যাবধি আর কোনও গবেষণা কার্যক্রম চোখে পড়েনি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। গবেষণা কার্যক্রম গুটিয়ে পড়লে এবং বিশাল জায়গা অরক্ষিত থাকায় স্থানীয় ভূমি খেকোরা জবর দখল করে নেয়। পড়ে অবস্থা বেগতিক দেখে গবেষণা কেন্দ্রের জায়গাগুলো ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করলে তা পুরোপুরি জবর দখলকারীদের কব্জায় চলে যায়। পরে এসব জায়গা ধীরে ধীরে বন বিভাগ হাতে নিয়ে সামাজিক বনায়নের প্লট দেন স্থানীয়দের।
এভাবে বন গবেষণা কেন্দ্রের ৪শ’ ২৫ একর ভূমির মধ্যে প্রায় ৪শ’ একর জমি নানা ছলছুতোয় তাদের আওতার বাইরে চলে যায়। বর্তমানে তাদের অফিস পাড়ায় কাগজে কলমে মাত্র ৩৫ একর জমি রয়েছে। এই ৩৫ একর অফিস আঙিনাবাদে পুরোটাই এখন জবরদখলকারীদের কব্জায়। সেখানে এখন আবাদ হচ্ছে আনারস, কলা, পেঁপেঁ, আদা, হলুদসহ নানা কৃষিপণ্য। এদিকে ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘুরে ফিরে তাদের বেতন ভাতা তুলে খাচ্ছেন এবং তাদের কোন কাজকর্ম নেই বলেও স্থানীয়রা জানান।
বনের গাছ শেষ হওয়ার পর তাদের আঙিনার গাছও দিন দুপুরে চুরি হচ্ছে। ডেপুটি রেঞ্জার ছুটিতে থাকলেও গবেষণা কেন্দ্রের আঙিনা চুরি যাওয়া কাঁঠাল গাছটি বাকি ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী রক্ষা করতে পারেনি। এমনকি এ পর্যন্ত তারা চুরি যাওয়া গাছটি উদ্ধারও করতে পারেনি। এ নিয়ে দেখা দিয়েছে জনমনে নানা প্রশ্ন।
এ ব্যাপারে মধুপুর বন গবেষণা কেন্দ্রের ডেপুটি রেঞ্জার অমরেন্দ্র নারায়ণ সরকার জানান, আমি ছুটিতে ছিলাম। এসে শুনলাম গাছ চুরি হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় জিডি করেছি।
গবেষণা কেন্দ্রের দখলে থাকা জমিতে আগের মতো বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশি গাছের বীজ সংরক্ষণ ও চারা উত্তোলন করে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য এলাকাবাসী উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।