স্বপন কুমার কুন্ডু, পাবনা: কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাবনা জেলার প্রায় ৪০ হাজার চাষি। এবার প্রায় ২০০ কোটি টাকা গরু-ছাগল বিক্রির আশা করছে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও চাষিরা। গত বছরের মতো সীমিত আকারে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করলে তারা ভালো দাম পাবেন বলে আশা করছেন।
পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. এনামুল হক জানান, পাবনায় এক দশক ধরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজাকরণ বেড়েছে। জেলায় প্রায় ১০ হাজার খামারি রয়েছেন যারা গাভী ও ষাঁড় পালন করেন। এছাড়া আরো ২০-২৫ হাজার ক্ষুদ্র কৃষক নিজ উদ্যোগে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন। তাছাড়া এ বছর জেলায় প্রায় ১০ হাজার হতদরিদ্র নারী বিভিন্ন এনজিওর টাকায় গরু কিনে পালন করেছেন। তাছাড়াও প্রায় ৪০ হাজার ক্ষুদ্র চাষির ছাগল-ভেড়া কোরবানির হাটে উঠবে। সব মিলিয়ে কোরবানির হাটে ৮০ হাজারের বেশি গরু, ছাগল ও ভেড়া বিক্রি হবে। গড় দাম হিসেবে পাবনায় প্রায় ২০০ থেকে ২২০ কোটি টাকার পশু বিক্রির আশা করছেন প্রাণিসম্পদ অফিস ও চাষিরা।
বেড়ার চতুর হাট ও সাঁথিয়ার বনগ্রাম হাট সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যাপারীরা ঢাকায় গরু সরবরাহের জন্য হাট থেকে গরু কিনছিলেন। তারা চাষিদের বাড়ি থেকে গরু কিনে অস্থায়ী গোয়ালে রাখা শুরু করেছেন। সাঁথিয়ার ব্যাপারী মোহাম্মদ আলী জানান, এবার চাষিরা দাম বেশি হাঁকছেন। তবে গত দু’ বছরের অভিজ্ঞতায় তারা এবার ভেবে চিন্তে দাম বলছেন।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক শ’ গো-খামার গড়ে উঠেছে। গ্রামগঞ্জে এমন কোনো বাড়ি নেই যেখানে ২-৪টি গরু পালন হচ্ছে না। প্রতি বছর গরু পালন করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে অনেকেই। গত এক দশকে শুধু কোরবানির গরু লালন পালন এবং কেনা বেচা করে বহু লোক নিজেদের ভাগ্য বদলে ফেলেছেন। এতে বেকার যুবক ও দরিদ্ররা খামার করে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। অন্যদিকে সচ্ছলতা এসেছে সংসারে। সংসারের অভাব ঘুঁচাতে অনেকে বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে খামার গড়ে তুলেছেন।
বেসরকারি সংস্থা ওসাকার নির্বাহী পরিচালক মাজাহারুল ইসলাম জানান, তারা গত অর্থ বছরে ৩ হাজার ৫০৪ জন দরিদ্র নারীর প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে মোট ৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ দেন।
অন্য দিকে নিউএরা ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়কারী জানান, গত অর্থ বছরে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য ২ হাজার ২৭৭ জন চাষির মধ্যে মোট ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পশু চিকিৎসক জানান, ৫ থেকে ১০ শতাংশ চাষি ক্ষতিকর ওষুধ খাইয়ে গরু মোটাতাজা করেন। তারা সাধারণত প্যারাকটিন, ভেটোরেক্স, ভ্যান্টোলিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ান। আর বেশি মাত্রায় ওষুধ খাওয়ানোর পর যখন গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন তাদের ডাক পড়ে। এক শ্রেণির হাতুড়ে চিকিৎসক এসব ক্ষতিকর ওষুধ কেনার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কয়েকজন চাষি জানান, অতি লোভী কয়েকজন চাষি সাধারণত কোরবানির ১৫ দিন বা এক মাস আগে গরু মোটাতাজা করার জন্য ক্ষতিকর ওষুধ খাওয়ান। আর এ কাজে তাদের সহযোগিতা করছেন এক শ্রেণির ব্যাপারী ও ফড়িয়ারা।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, পাবনা এলাকায় গরু চাষিদের মধ্যে স্টেরয়েড জাতীয় ক্ষতিকর ওষুধ খাওয়ানোর প্রবণতা কম। এছাড়া অ্যানথ্রাক্স রোগ নিয়ে যে আতঙ্ক ছিল তা এখন নেই।