স্থান ও পুঁজিসহ নানা সংকটে খুলনার চামড়া ব্যবসা

খুলনা প্রতিনিধি: কোরবানি ঈদের মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও এখনো চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। ব্যবসা করার জন্য নিজস্ব স্থান ও পুঁজি সংকট, ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য, ব্যাংক ঋণ সুবিধা না পাওয়া এবং ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া টাকা না পাওয়ায় দিন দিন ছোট হয়ে আসছে খুলনার এক সময়ের জমজমাট কাঁচা চামড়ার ব্যবসা। আগে দুইশ’র মতো ব্যবসায়ী দোকান থাকলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১২টিতে। এছাড়া এবারের কোরবানিতে চামড়া পাচারের আশঙ্কা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন চামড়া পাচাররোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

খুলনা নগরীর শেরেবাংলা রোডের পাওয়ার হাউস মোড়ে প্রায় ৮০ বছর আগে গড়ে ওঠে কাঁচা চামড়া ব্যবসা। জমজমাট এই ব্যবসায় তখন প্রায় দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু এখন মাত্র ১২ জন ব্যবসায়ী কোনো রকমে টিকে আছে। চামড়ার দোকানগুলো পরিণত হয়েছে লোহা কিংবা ম্যাকানিকের দোকানে। ব্যবসায়ীদের নিজস্ব দোকান না থাকা, অব্যহতভাবে লবনের মূল্যবৃদ্ধি ও ব্যাংক ঋণ সুবিধা না পাওয়াসহ নানা কারনে দিন দিন চামড়া ব্যবসায়ীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

খুলনার সাবু লেদারের মালিক শাহানুর আলম বলেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন লবনের। কমদামি এই লবন আসতো ভারত থেকে। কিন্তু আমাদের দেশ এখন আর সেই লবন আমদানি করে না। ফলো আয়োডিনবিহীন এই লবনের দাম বেড়ে গেছে দ্বিগুনেরও বেশি। পক্ষান্তরে ট্যানারি মালিকরা চামড়ার বেশি মূল্য দিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায় লাভ করা দায় বলে মনে করেন তিনি।

খুলনা জেলা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছালাম ঢালী বলেন, চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়েও ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে দীর্ঘদিনের বকেয়া না পাওয়ায় পুঁজি সংকটে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। খুলনা থেকে কাঁচা চামড়া কিনে তাঁরা কিছু অংশ যশোর ও নাটোর ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করে। আর বড় অংকের চামড়া বিক্রি হয় ঢাকা ট্যানারি মালিকদের কাছে। কিন্তু তাদের কাছে এখনও খুলনার ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা বাকি। ফলে এবছর সকলে চামড়া কিনতে পারবে না বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে ব্যাংক থেকেও মেলে না ঋণ। এজন্য অনেকটা বাধ্য হয়েই ধারদেনা কিংবা চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসার চাকা সচল রাখছেন কেউ কেউ।

সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ জানান, কোন একটি ফাঁকা স্থানে যাতে চামড়া ব্যবসা করা যায় এজন্যে সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসকের সাথে বার বার আলোচনা করেছেন। কিন্তু কোন ফল হয়নি। অপরদিকে বাড়িওলাদের বাড়ি ছাড়িয়ে নেওয়া ও ঋণের দায়ে অনেক ব্যবসায়ীই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া কোরবানি উপলক্ষে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ও চামড়া পাচারের শঙ্কার কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এসে চামড়া কিনে নিয়ে যায়। তাদের দাপটে চামড়া ব্যবসায়ীরা অসহায় হয়ে পড়ে। এসব মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সরকারের বেধে দেয়া দামের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা দামে চামড়া ক্রয় করে।

পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্যা জানান, চামড়া পাচাররোধে তারা শুন্য সহনশীল (জিরো টলারেন্স) মাত্রায় রয়েছেন। তাই যে কোনভাবে চামড়া পাচার ঠেকাতে তারা প্রস্তুত। ইতোমধ্যে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি এবং পাচারকারীদের একটি প্রাথমিক তালিকাও প্রস্তুত করেছেন তারা।

কার্তিক লেদার কমপ্লেক্সের মলিক, আব্দুল জলিল জানান, শুধু লবনের দামই নয়, পরিবহন খরচ ও শ্রমিকের মজুরিও অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে। এছাড়া আগে তারা অতিরিক্ত দরে চামড়া কিনেও বিপাকে পড়েছে। তাই এ বছর বুঝে দেখে চামড়া কিনবে তারা।

বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত চামড়া শিল্প। তাই এই শিল্পের উন্নয়নে খুলনার ব্যবসায়ীদের জন্য নিজস্ব জায়গা নির্ধারণ, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে রাজম্ব আয় আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন আব্দুল জলিলের মতো অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.