ঈশ্বরদী রেলওয়ের ৮০ ভাগের বেশি কোয়ার্টার ও জমি অবৈধদের দখলে

স্বপন কুমার কুন্ডু, ঈশ্বরদী (পাবনা): ঈশ্বরদী রেলওয়ের ৮০ ভাগের বেশি আবাসিক কোয়ার্টার এবং ফাঁকা জমি অবৈধদের দখলে চলে গেছে। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত ঘোষিত ৩৯৬ টি ইউনিটও এর মধ্যে রয়েছে। ফলে রেলওয়েতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাধ্য হয়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। এতে বাড়ি ভাড়া  হতে প্রাপ্ত রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যেকারণে রাজস্ব আয়ে লক্ষ্যমাত্র অর্জিত হচ্ছেনা।

new-image
ঈশ্বরদী রেলওয়ের ৮০ ভাগের বেশি কোয়ার্টার ও জমি অবৈধদের দখলে চলে গেছে।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে অফিসের  ২০১৫ সালের জুন মাসের এক প্রতিবেদনে জানা যায়,  গুরুত্বপূর্ণ রেল শহর ঈশ্বরদীতে রেলওয়ের ৩৪২টি আবাসিক ভবন রয়েছে। এই ভবনগুলোতে মোট ইউনিটের সংখ্যা ১ হাজার ২১২টি। এই ইউনিটগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি অবৈধদের দখলে রয়েছে। পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও ৩৯৬টি ইউনিটে  অবৈধভাবে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন।  এই আবাসিক ভবনগুলো মূলত: দুই ও এক ইউনিটের। নিম্ন আয়ের বেশিরভাগ মানুষই এই কোয়ার্টারগুলোতে বসবাস করছেন। তবে কেউ কেউ এদের কাছ থেকে নিয়মিত ভাড়াও আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এই কোয়ার্টার কারা ভাড়া দিয়েছেন বা কত টাকা ভাড়া দিতে হয়, এব্যাপরে বসবাসকারীরা কেউই মুখ খুলতে রাজী হয়নি।

তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছেন, বৈধ কোনও বসবাসকারী এসব ভবনে বসবাস না করায় তারা ভাড়া খাতে কোন আয় করতে পারছেন না। একজন অবৈধ বাসিন্দা বলেন, আগে আমার বাবা রেলওয়েতে চাকরি করতেন। জন্মের পর হতে এখানে আছি। তাই এখনও বাস করছি। এসব বাসায় এমন অনেকেই রয়েছেন যাদের বাপ-দাদা আগে রেলে চাকরি করতেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত উত্তরাধিকারের মতোই বাস করে চলেছেন। পরিবারগুলো বড় হয়ে যাওয়ায় কোয়ার্টারের সামনে ও পিছনের ফাঁকা জায়গা রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই দখলে নিয়ে সেমিপাকা বাড়ি করে বসবাস করে চলেছেন।

এসব কোয়ার্টাার মাঝে মধ্যে হাত বদলও হয়। এই হাত বদলের সময় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয় বলে জানা গেছে। অনেকেই এই কোয়ার্টারে বিদ্যুৎ সংযোগও নিয়েছে। এরা পৌর এলাকার সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হয় না। ঈশ্বরদীর রেলওয়ের আবাসিক কোয়ার্টারের আশে পাশে বিস্তর ফাঁকা জায়গা ছিল। এই জায়গাগুলোতে এখন নিজ স্বাধীন মতো বাড়িঘর তুলে লোকজন অবৈধভাবে বসবাস করছে। এসব ফাঁকা জায়গা দখলদাররা হরহামেশা প্রতি কাঠা ২০-৪০ হাজার টাকা দামে বিক্রি করলেও দেখার কেউই নেই। অথচ এই জায়গাগুলো লীজ দিয়ে রেল প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় অর্জন করতে পারে।

এদিকে রেলের শ্রমিক- কর্মচারীরা জানান, রেলের নিজস্ব কোয়ার্টার থাকা সত্বেও বাড়তি টাকা দিয়ে অন্যত্র তাঁদের বাড়ি ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। এতে রেল কর্মীদের যেমন বেশি টাকা খরচ হচ্ছে, তেমনি রেল রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে। কোয়ার্টার দেখাশোনার কাজে নিয়েজিত কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই এসব কোয়ার্টার ও জমি দখলমুক্ত হচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.