রতন সিং, দিনাজপুর: কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুরের চামড়া বাজারের ব্যবসায়ীরা।
মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্ধারিত মূল্যের চাইতে বেশি দামে চামড়া ক্রয় করে এখন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন তারা। আর চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ পর্যন্ত গত বছরে প্রায় ১৫ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ করেনি ট্যানারী মালিকরা। পুঁজির অভাবের কারণেও চামড়া কিনতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন তারা। ফলে দিনাজপুরের চামড়ার বাজার চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার দিনাজপুরের রামনগর। এখানে দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলার চামড়া বেচাকেনা হয়। প্রায় ২ শতাধিক ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা চামড়া ক্রয় করে ট্যানারী মালিকদের নিকট সরবরাহ করেন। প্রতিবছর এখান থেকে প্রায় ৭০-৭৫ হাজার পিচ গরু ও ৪০-৫০ হাজার পিচ ছাগলের চামড়া বেচাকেনা হয়। যার মধ্যে শুধুমাত্র কোরবানির সময়েই এই বাজারে প্রায় ৪০ হাজার পিচ গরু ও ২৫ হাজার পিচ ছাগলের চামড়া বেচাকেনা হয়।
তবে এবারে গত বছরের চেয়ে চামড়া বেচাকেনা অনেক কম। চামড়ার বাজারে গিয়ে দেখা যায় অনেক ব্যবসায়ীই চামড়া কেনেন নি। আবার যারা ক্রয় করছেন তারাও দাম হাঁকাচ্ছেন না নেওয়ার দামে। গত বছর যে চামড়া ২ হাজার থেকে ২৫শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে এবারে তার দাম ১১শ’ থেকে ১২ টাকা। একইভাবে গত বছরে যে খাসির চামড়া ১৫০ থেকে ২শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে এবারে তার দাম পড়ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব চামড়া এই বাজারে আসে তা গত বছরের দামে গরুর চামড়া ৭০ টাকা ফুট, খাসির চামড়া ১৪ টাকা ফুট দরে ক্রয় করেছেন। চলতি বছরে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়ার এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন লবনযুক্ত গরুর চামড়া ঢাকায় ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ টাকা এবং খাসির চামড়া ২০ টাকা ফুট নির্ধারণ করেছেন।
তাদের অভিযোগ, এবারে যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা লবনযুক্ত নয়, বরং লবন ছাড়াই তার চেয়ে বেশি দামে চামড়া ক্রয় করতে হয়। পাশাপাশি জেলার প্রায় ২০০ জন চামড়া ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা ঢাকা ও নাটোরের চামড়া আড়ৎদার ও ট্যানারী মালিকদের কাছে গত বছরের কোরবানির চামড়া বাবদ ১৫ কোটি টাকা পাবেন। কিন্তু গত ১ বছরে পাওনার মাত্র ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পরিশোধ করা হয়েছে। পুরোপুরি পাওনা টাকা বুঝে না পাওয়ায় কোরবানির চামড়া কেনার ব্যাপারে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের মাঝে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম ও সেলিম জানান, যেভাবে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে করে গত বছরের তুলনায় প্রতি চামড়ার মূল্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এরপরেও বেশি মূল্যে চামড়া ক্রয় করে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। এবারে চামড়ার যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে তারা সন্তুষ্ট নন। তাদের দাবি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীদের মতামত ও বিশ্ববাজারের সাথে সঙ্গতি রেখেই যাতে করে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
যেসব ব্যবসায়ী চামড়া ক্রয় করে ট্যানারীগুলোতে পাঠায় তাদের মধ্যে একজন সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, গত বছরের চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রায় ১৫ কোটি টাকা বয়েকা রয়েছে। তার নিজেরও রয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকার মত বকেয়া। তিনি জানান, তার পাওনার মাত্র ২৫ শতাংশ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এই টাকা দিয়ে যতটুকু চামড়া ক্রয় করা যায় ততটুকুই ক্রয় করবেন। বাড়তি পুঁজি খাঁটিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়তে চান না তিনি।
দিনাজপুর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আখতার আজিজ জানান, চলতি বছরে চামড়ার যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার চেয়ে চামড়ার মূল্য অনেক বেশি। তাছাড়া মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়ার মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, পাওনার ১৫ কোটি টাকার মধ্যে ঈদের দু’দিন আগে ট্যানারী মালিকরা মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ বকেয়া মূল্য পরিশোধ করেছেন। এভাবে চলতে থাকলে চামড়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।