আব্দুল্লাহ আবু এহসান, মধুপুর (টাঙ্গাইল): আজ উত্তর টাঙ্গাইলের পানকাতা-মাহমুদপুর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে (৩০ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তার এদেশীয় দোসর রাজাকার ও আলবদররা টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী ও গোপালপুর উপজেলার পানকাতা-মাহমুদপুর গ্রামে নৃশংসভাবে গণহত্যা চালিয়ে ১৭ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। তারা আরও ৫০/৬০টি বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ব্যাপক লুটতরাজসহ ৬০/৬৫ জন গ্রামবাসীকে গুরুতরভাবে আহত করে। যাদের কয়েকজন এখনো পঙ্গুত্ববরণ করে মৃতপ্রায় অবস্থায় বেঁচে রয়েছেন।
১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানা সদর থেকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর একটি দল ভারী অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সাথে প্রায় দুই শতাধিক রাজাকার ও আলবদরকে নিয়ে ওই এলাকার তৎকালীন এমএনএ এবং বঙ্গবন্ধুর অন্যতম বাজনৈতিক সহচর মরহুম হাতেম আলী তালকদারের বাড়ি মাহমুদপুর গ্রাম এবং আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত পাশের পানকাতা, বলিভদ্র, কেরামজানী, সয়া ও ইস্পঞ্জিারপুর গ্রাম গুড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আক্রমণ চালায় এবং প্রথমে ৩ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে লুটপাট করতে থাকে।
এমতাবস্থায় ধনবাড়ীর কেরামজানী বাজারে অবস্থান করা কাদেরিয়া বাহিনীর হনুমান কোম্পানির কমান্ডার কাজী আশরাফ হুমায়ুন বাংগাল তাঁর সঙ্গীয় ফৌজ নিয়ে পাকিস্তানী হানাদারদের প্রতিহত করার লক্ষ্যে পানকাতা গ্রামে পৌঁছে এক মরণ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন এবং প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। প্রায় ৪ ঘন্টাস্থায়ী এ যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে রসদ ফুরিয়ে যাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটলেও হানাদার বাহিনীর অগ্রযাত্রাকে তারা থামিয়ে দিতে সমর্থ হন। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কেউ হতাহত না হলেও হানাদার বাহিনীর এক সেনাসহ ৩ জন গুরুতর আহত হয়। এ সময় পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী প্রবল উন্মাদনা ও হিংস্রতায় আশপাশের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেয় এবং লুটপাটসহ পানকাতা গ্রামের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মোট ১৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
দিবসটি আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে স্থানীয় এলাকাবাসী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বাদ জুম্মাহ মিলাদ মাহফিল, দোয়া, তবারুক বিতরণ ও স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভা। কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন তখনকার কিংবদন্তিতুল্য মুক্তিযোদ্ধা কাদেরিয়া বাহিনীর হনুমান কোম্পানির কমান্ডার কাজী আশরাফ হুমায়ুন বাংগাল।