বাগেরহাটে এশিয়ার বৃহত্তম ৬০১ মূর্তির মন্ডপ: শারদীয়া দুর্গোৎসবে অনন্য আয়োজন

বাগেরহাট প্রতিনিধি: রং তুলির আঁচড়ে সুনিপুণ ভাস্কর্য। এক মন্ডপে ৬০১ প্রতিমার অনন্য স্থাপন। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপড় ও কলি যুগের সনাতন ধর্মীয় কৃষ্টি-কালচার, পৌরাণিক কাহিনী ও পার্বনের ভিন্ন ভিন্নœ দৃশ্যের পাশাপাশি সামাজিকভাবে মানুষকে সচেতন করার অনন্য আয়োজনে প্রতিমা নির্মাণ। অপরূপ সাজসজ্জা আর আলোর খেলায় তা হয়ে উঠছে মনোমুগ্ধকর।

bagerhat-photo-3-04-10-16
বাগেরহাটে এশিয়ার বৃহত্তম ৬০১ মূর্তির মন্ডপ।

মন্ডপের সামনে বিশাল জলাধারে কৈলাস পর্বতের চূড়ায় ধ্যানমগ্ন মহাদেব। তারই জটায় মা গঙ্গা ঝর্ণা রূপে নেমে আসছে। পাদদেশে রাম, সীতা, লক্ষণ আর ভক্ত হনুমান। পর্বতের চূড়ায় মেঘের ভেলা। পুকুরে ভাসমান পদ্ম আর হংসের নান্দনিক উপস্থাপন। ডিজিটাল আলোকসজ্জার অসাধারণ আবহ শিল্প মাধ্যমের অপূর্ব সংযোজন। এভাবেই শারদীয়া দুর্গোৎসবে এশিয়ার বৃহত্তম মন্ডপ তৈরি হয়েছে বাগেরহাটের হাকিমপুর গ্রামে ডা: দুলাল শিকদার-এর বাড়ির বিশাল প্রাঙ্গণে।

সর্ববৃহৎ এ দুর্গামন্ডপে ভাস্কর, মৃৎ শিল্পীরা এখন রং তুলির শেষ আাঁচড়ে আরও সুনিপুণ কারুকাজ ফুটিয়ে তুলতে মহাব্যস্ত। প্রতিটি প্রতিমাকে আরও কত আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। একদিন পরেই মায়ের পূজা শুরু। মনোরম উপস্থাপন, বাহরী সাজসজ্জা আর আলোর খেলায় প্রাণবন্ত করে তোলা হচ্ছে মন্ডপ। ফুসরত নেই শিল্পীদের। দীর্ঘ সাত মাস ধরে ১৫ জন শিল্পী দিনরাত কাজ করে ৬০১টি প্রতিমার এই মন্ডপ তৈরি করেছেন।

৬০১ প্রতিমার পাশাপাশি এবার শিকদার বাড়ির পূজার বিশেষ আকর্ষণ জলাধারে নির্মিত ত্রিমাত্রিক শিল্প উপস্থাপনা, যা দুর্গামন্ডপে নতুন চর্চার শুরু। এই ইনস্টলেশন আর্টে উপস্থাপিত হয়েছে কৈলাস পর্বতের চূড়ায় ধ্যানমগ্ন মহাদেব ও তার জটায় মা গঙ্গার ঝর্ণা রূপে নেমে আসা। তারই পাদদেশে রাম, সীতা, লক্ষণ ও রাম ভক্ত হনুমান। পর্বতের চূড়ায় মেঘের ভেলা এবং সামনে ভাসমান পদ্ম ও হংস এই উপস্থাপনায় নান্দনিক পূর্ণতা এনেছে। ডিজিটাল আলোকসজ্জার এক অসাধারণ আবহ এই শিল্প মাধ্যমের নতুন সংযোজন। লিটন শিকদার ও তাঁর সহধর্মীনী পুজা শিকদারের এই অসাধারণ শিল্পচিন্তার রূপদান করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের প্রাক্তণ ছাত্র দিব্যতনু দাস। যা বাস্তবায়ন করেছেন ভাস্কর আমিনুল ইসলাম আশিক ও তার দল।

এক কথায় ভক্ত দর্শনার্থীদের বিমোহিত মুগ্ধতায় ভরে তোলার যেন সব আয়োজনই করা হয়েছে এই মন্ডপে। ব্যক্তি উদ্যোগে এ আয়োজন অভূতপূর্ব। এখানে শারদীয়া দুর্গোৎসব যেন নতুন মহিমায় আর্বিভূত হয়েছে। প্রতিমা দর্শন করতে করতে আপন মনে গুঞ্জরিত হয়, “ও নিরুপম-সুন্দরতম, ও রূপ দেখে সাধ মেটে না- আরও দেখার সাধ জাগে..।”
ধর্মপ্রাণ দুলাল ও রমা শিকদার দম্পতি ২০১০ সালে ১০১টি প্রতিমা নিয়ে এই মন্দিরে দুর্গাপূজা শুরু করেন যা সময়ের পরিক্রমায় এ বছর ৬০১টিতে উন্নীত হয়েছে।

এ প্রতিমা তৈরির প্রধান শিল্পী খুলনার কয়রা উপজেলার বিজয় বাছাড় জানান, পনেরো জন শিল্পী গত সাত মাস ধরে এই মন্ডপে অবস্থান করে মূর্তি গড়ছেন। ৬০১ প্রতিমা নিয়ে এবার বৃহত্তর এ মন্ডপ সাজানো হয়েছে। এটি তার জীবনের অবিষ্মরণীয় কাজ বলে তিনি উল্লেখ করেন। সরেজমিন পূজা মন্দিরে গিয়ে দেখা গেছে, সত্য-ত্রেতা-দ্বাপড়-কলি যুগের সনাতন ধর্মের নানান কাহিনীর অপূর্ব অবতারণা করা হয়েছে। পাশাপশি ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাজের অন্যায়, অবিচার ও কুসংস্কার দূর করার নানান প্রতিকৃতি নির্মাণ করা হয়েছে।

আয়োজক লিটন শিকদার ও তার সহধর্মীনী পুজা শিকদার বলেন, সত্য, ত্রেতা, দাপর ও কলি যুগের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রতিস্থাপন করে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। বহুমূর্তি নিয়ে আঙ্গীক ও বৈচিত্রে অসাধারণ মন্দির দর্শন করে মানুষ উজ্জ্বিবিত হবে।

নান্দনিক এ আয়োজন দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তিন লক্ষাধিক ভক্ত এখানে আসবেন বলে আয়োজকেরা আশা করেন। শুক্রবার মহা ষষ্টির দিনে এ মন্দিরে শারদীয়া উৎসবের উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর।

পূজোর পাঁচ দিন এই নির্জন হাকিমপুর শিশু-যুবা-বৃদ্ধার পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠবে। মিলবে বাহারী আয়োজনে গ্রামীণ মেলা। নিরাপত্তার চাদরে থাকবে ঢাকা, জানিয়েছেন আয়োজকরা।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার পঙ্কজ কুমার রায় জানান, প্রতি বছরের মত এবছরও আনন্দঘন পরিবেশে দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে। সার্বজনীন দুর্গোৎসবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন ও পুলিশ সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে তাঁরা উল্লেখ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.