খুলনা প্রতিনিধি: বোধনের মাধ্যমে দেবীর নিদ্রা ভেঙেছে। সায়ংকালের দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস এই নিয়েই ষষ্ঠীপূজার মধ্যদিয়েই শুরু হল হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে চিরচেনা খুলনাকে মনে হচ্ছে এক অচেনা নগরী। আলোর ঝলকানিতে ঝলমল করছে খুলনা শহর।
শুধু শহরই নয় এধরনের আয়োজন হয়েছে খুলনার ৯০৮টি পূজা মন্দিরে। এছাড়া পূজায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে প্রশাসন নিয়েছে নানা উদ্যোগ। যেদিক দিয়েই খুলনার ধর্মসভা মন্দিরের দিকে যাওয়া হবে সেদিক দিয়েই চোখে পড়বে বিভিন্ন আকৃতি ও রঙের বাতির সমাহার। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে।
শুধু ধর্মসভাই নয় কালীবাড়ী, ডেণ্টাঘাট, জুয়েলারী পট্টি, সিমেট্রি রোড, দোলখোলা, রূপসা শ্মশানঘাট, শীববাড়ীসহ সমস্ত মন্দির সংলগ্ন এলাকায় সাজ সাজ রব।
এলইডি পার্কার, এলইডি সীমার, স্পর্ক, বন্ধু লেজার, সিঙ্গেল লেজার, ফুল লেজার, ডিসকো লেজার ও ডিজিটাল গেটসহ নানা আকৃতির গাছকে লাইটে মুড়ে রূপ দেওয়া হয়েছে রকমারি সাজে।
এবছর খুলনা জেলার নয় উপজেলায় ৭৯১টি ও মহানগরের আট থানায় ১১৭টি সব মিলিয়ে ৯০৮টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
খুলনা জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের তথ্য মতে ৯ উপজেলার বটিয়াঘাটায় ৮৯টি, ডুমুরিয়ায় ১৮৩টি, রূপসায় ৭২টি, দিঘলিয়ায় ৬২টি, কয়রায় ৪৮টি, দাকোপে ৭৭টি, পাইকগাছায় ১৩৮টি, ফুলতলায় ৩০টি, তেরখাদা ৯২টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর খুলনা মাহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের তথ্য মতে নগরীর আটটি থানায় তিনটি পারিবারিকসহ মোট ১১৭টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
যার মধ্যে খুলনা সদর থানায় ২৫টি, সোনাডাঙ্গা থানায় ১১টি, খালিশপুর থানায় ১০টি, দৌলতপুর থানায় ২০টি, খানজাহান আলী থানায় ১০টি, হরিণটানা থানায় ৪টি, লবনচরা থানায় ৮টি ও আড়ংঘাটা থানায় ২৮টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
খুলনা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিজয় ঘোষ জানান, সব মন্ডপে মাটির কাজ শেষ হলেও এখনও কিছু কিছু প্রতিমায় চলছে রং তুলির শেষ টান। এবার পূজা উপলক্ষে জেলা প্রশাসন সকল মন্দিরে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে।
এছাড়া খুলনা সিটি কর্পোরেশন প্রতিটি সার্বজনিন পূজা মন্ডপে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান দিয়েছে, যা গতবারের চেয়ে এক হাজার টাকা বেশি।
খুলনা মাহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রসান্ত কুন্ডু জানান এবারের পূজা নির্বিঘœ করতে ইতোমধ্যে মহানগর পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের সাথে প্রতিটি পূজা মন্ডপে শান্তি শৃঙ্খলার বিষয়ে জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
থানা ভিত্তিকও পুলিশের সাথে উপজেলা বা থানা পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের বৈঠক হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি মন্দিরে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেকব দলও থাকবে যাতে করে দর্শনার্থীদের সঠিকভাবে ঠাকুর দর্শন করতে পারে।
কেএমপি’র অতিঃ উপ-কমিশনার মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, প্রতিটি মন্ডপে এক জন পুলিশ অফিসারসহ ৪ থেকে ৫জন পুলিশ সদস্য আইন-শৃংখলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে। এর সাথে থাকবে আনসার সদস্যরা। একই সাথে আটটি থানায় ২৫টি মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক টহল দেবে।
জেলা পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্যা বলেন, জেলার সকল মন্দিরগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা আইন-শৃংখলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেব। এছাড়া পূজা আয়োজনকারী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় থাকবে মোবাইল পেট্রোল ও মোটরসাইকেল পেট্রোল।