ভেজাল ওষুধ তৈরির মামলায় খুলনার শিল্পপতি শাহনেওয়াজ কারাগারে

প্রতিনিধি, খুলনা: নকল ওষুধ তৈরির অভিযোগে র‌্যাবের দায়ের করা মামলায় খুলনার বিশিষ্ট শিল্পপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা কাজী শাহনেওয়াজকে (৬৮) কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

সোমবার গ্রেফতারের পর রূপসা থানার পুলিশের হাতে শাহনেওয়াজকে সোপর্দ করে র‌্যাব। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। পরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন ফরাজী তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বিষয়টি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সোমবার খুলনার রূপসা থানাধীন জাবুসা চর রূপসায় অবস্থিত কাজী শাহনেওয়াজের মালিকানাধীন রফতানিযোগ্য হিমায়িত মাছ প্রক্রিয়াজাত প্ল্যান্ট ‘শাহনেওয়াজ সি ফুড’ নামের প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে নকল ওষুধ তৈরির কারখানার সন্ধান পায় র‌্যাব।

khulna-kazi-shanewaz
কাজী শানেওয়াজ।

এ সময় বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ ও ওষুধ তৈরির কাঁচামাল উদ্ধার করে র‌্যাব। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক কাজী শাহনেওয়াজ ও কর্মকর্তা শরীফ রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।

আজ মঙ্গলবার এ ঘটনায় কাজী শাহনেওয়াজসহ চার জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১২-১৩ জনের বিরুদ্ধে রূপসা থানায় একটি মামলা দায়ের করে র‌্যাব।

মামলার অপর আসামিরা হলেন ঢাকার শান্তিবাগ মসজিদ রোডের বাসিন্দা মৃত সাইফুল্লাহর ছেলে মো. জাকির হোসেন (৪৮), খুলনার বাগমারা পূর্ব রূপসা এলাকার মো. আনোয়ার হোসেন বেগের ছেলে মো. হাবিবুর রহমান শেখ (৪৫), সিরাজগঞ্জের মো. স্বপন শেখের ছেলে সজীব (৩৫)।

অভিযানে এসিআই কোম্পানির নকল ৩ লাখ ৭৫ হাজার পিস এ্যান্টিবায়োটিক ফ্লুক্লক্স ক্যাপসুল ও এক বস্তা রেনিটিড ট্যাবলেটের পাশাপাশি চার বস্তা বিভিন্ন ব্রান্ডের নকল ওষুধ জব্দ করা হয়।

এছাড়া আড়াই লাখ পিস ওষুধের খালি খোসা পাওয়া যায় । নকল ওষুধের কাঁচামাল, চালের গুঁড়া, কসমেটিক, কেমিক্যাল, পাউডারসহ জাল ওষুধ বানানোর কয়েক কোটি টাকার উপকরণ জব্দ করে র‌্যাব সদস্যরা ।

এসব ওষুধ ঢাকার মিটফোর্ডসহ (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল) বিভিন্ন ওষুধের দোকানে সরবরাহ করা হতো বলে জানা গেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই হিমায়িত মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডের আড়ালে প্রতিষ্ঠানটি নকল ওষুধ তৈরি করছিল বলে জানান র‌্যাব-৬ এর মেজর সুরুজ।

তিনি জানান, বেশ কিছুদিন ধরে গোয়েন্দা নজরদারির পর র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-৬ যৌথ অভিযান চালিয়ে নকল ওষুধের কারখানার মালিককে আটক করে। র‌্যাব-১ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফিরোজ আহম্মেদ প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা করে দেন।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠিত এই ব্যবসায়ী রপ্তানি খাতে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি হিমায়িত মৎস্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এবং খুলনা চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। একাধিকবার তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জাতীয় পুরস্কার নিয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি নড়াইল। সেখান থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্যও চেষ্টা করেন তিনি। শাহনেওয়াজ আওয়ামী লীগের আগের একটি কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। তবে বর্তমানে তিনি আগের মতো রাজনীতিতে সক্রিয় নেই বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। নকল ওষুধ তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ঘটনায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।

Save

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.