শুঁড়ে প্যাঁচিয়ে মাথা থেতলে বৃদ্ধকে হত্যা করল বুনোহাতি

হাকিম বাবুল, শেরপুর: শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নের বালিজুরি গ্রামে বুনোহাতির আক্রমণে ইয়ার হোসেন (৬০) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন।

গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাতির আক্রমণের শিকার হন তিনি।

এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামে হাতির আক্রমণে দুই নারীসহ সাত জনের মৃত্যু হয়েছে।

শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা নাছরিন জানান, রাতে বালিজুরি এলাকায় ৫০/৬০টি বন্যহাতি নেমে আসে। ইয়ার হোসেন বসতঘর থেকে বের হওয়ার সময় হাতির সামনে পড়েন। একটি হাতি তাকে শুঁড় প্যাঁচিয়ে ধরে পা দিয়ে মাথা পিষ্ট করলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

রানীশিমুল ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা জানান, বন্যহাতি ওই এলাকাতেই অবস্থান করছে। সোমবার সকালে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতীর তাওয়াকুচা এলাকায় একটি বন্যহাতি মারা পড়ার হাতির দল উন্মত্ত হয়ে ওঠে।

মৃত হাতির ময়নাতদন্তের পর মাটিচাপা

ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের তাওয়াকুচা নয়াপাড়া গ্রামে উদ্ধার হওয়া বন্যহাতির মরদেহটি সোমবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে ঘটনাস্থলের পাশেই মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। এদিন ভোরে ওই এলাকার সীমান্ত সড়কের কাছে একটি ধানক্ষেতের পাশে হাতিটি মৃত পাওয়া যায়।

বন বিভাগ ও বন্যপ্রাণী কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দীপক কুমার সরকার মৃত হাতির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। তিনি জানান, মৃত হাতিটির শুঁড়ের নিচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাতিটি শুঁড়সহ লম্বায় ১৮ ফুট। বয়স ৪০ বছরের বেশি হবে। মরার পর হাতিটিকে বসা অবস্থায় পাওয়া যায়।  এটি নারী হাতি। নারী হাতিরা সাধারণত দলনেতা হয়ে থাকে।

sherpur-dead-elephant-post-mortem
মৃত হাতি দেখতে এলাকাবাসীর ভিড়।

তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে হাতিটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। ঘটনাস্থলের পাশেই গর্ত খুড়েঁ হাতির মরদেহটি মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। হাতিটির পাকস্থলীসহ কিছু অংশ ভিসেরা পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

তবে স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যায়, গত বেশ কিছুদিন যাবত কাংশা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বন্যহাতির তাণ্ডডব বৃদ্ধি এবং দেড়মাসে নয়জন মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীর পাতা বিদ্যুতের ফাঁদে এ হাতিটি মারা যেতে পারে। এর আগে গত ১ অক্টোবর রাতে পানবর এলাকার একটি ধানক্ষেতে আরেকটি বুনোহতির মৃতদেহ উদ্ধার হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা জহুরুল হক জানান,  রাতে হাতির দলের চিৎকার শুনে আশপাশের কয়েকশ’ মানুষ তাওয়াকুচা টিলাপাড়া খেলার মাঠে জমায়েত হয়। ওই এলাকার লোকজন মশাল জা¡লিয়ে, পটকা ফাটিয়ে, জেনারেটরের আলো জ্বালিয়ে ও টিন বাজিয়ে হাতি খেদানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু হাতির দল উল্টো তাদের দিকে এসে ধাওয়া দেয়। এসময় হাতির দল সামনের লোকালয়ে চলে এসে স্থানীয় সীমান্ত সড়ক পাড়ি দিয়ে তাওয়াকুচা নয়াপাড়া গ্রামে তাণ্ডব চালিয়ে মমেনা খাতুন, ময়নাল মিয়া, ময়ছান আলী, আজির উদ্দিন, মেহের আলী, আমজাদ হোসেন, আব্দুল কাদির, হোসেন আলীর বাড়ি এবং গুরুচরন দুধনই গ্রামের আছিয়া খাতুনের দোকানঘর ভাঙচুর করে। ভোরে একটি হাতি মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, গত ছয় মাসে ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী হালচাটি, তাওয়াকুচা, গান্ধীগাঁও ও পানবর এলাকায় পাঁচটি বুনোহাতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো।

#DesherKhobor

Save

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.