কুয়াকাটার কাছেই লাল কাঁকড়ার গঙ্গামতি সৈকতে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): কলাপাড়ার গঙ্গামতি সমুদ্র সৈকত এখন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। জোয়ারের সময় কুয়াকাটা সৈকত পানিতে তলিয়ে থাকায় গঙ্গামতি সৈকতে পর্যটকদের পদচারণা বাড়ছে। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য, বিস্তীর্ণ সৈকতের বালুকাবেলায় লাল কাঁকড়ার খেলা ও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। শীত শুরু না হলেও এই সৈকতে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিরা।

kalapara-pic-0223-10-2016
কুয়াকাটার কাছেই লাল কাঁকড়ার গঙ্গামতি সৈকতে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে|

কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর বালিয়াতলী স্টেশনের একটি মাত্র খেয়া নৌকা পেরিয়ে সড়ক পথে গঙ্গামতি সৈকতে পৌঁছতে মাত্র এক ঘন্টা সময় লাগে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে কুয়াকাটার এ বিকল্প সড়ক পথে গঙ্গামতি সৈকত ঘুরে কুয়াকাটায় রাত্রি যাপন পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের এক অন্যমাত্রা যোগ করেছে।

কলাপাড়ার ধুলাসার ইউনিয়নের গঙ্গামতি সৈকতের অবস্থান। প্রায় তিন হাজার একরেরও বেশি খাসজমি নিয়ে বিশাল সমুদ্রের বেলাভূমি। বনবিভাগের মাইলের পর মাইল সংরক্ষিত বনাঞ্চল প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য যেন সাজিয়ে রাখা। এ বনাঞ্চলে বিরল প্রজাতির পাখিসহ মাঝে মধ্যেই চোখে পড়বে বন্য শুকড়, কাঠ বিড়ালী, শিয়াল ও বানর। কুয়াকাটা সৈকত থেকে গঙ্গামতি সৈকতের দূরত্ব মাত্র ৭ মিলোমিটার।

গঙ্গামতি সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। এখানে গ্রীষ্ম, বর্ষাসহ সকল ঋতুতেই পাখিদের কলরবে মুখরিত থাকে। বিস্তীর্ণ সৈকতের বালুকাবেলায় সারি সারি সাজানো জেলেদের নৌকার বহর। সকাল থেকে এ নৌকা সাজানো থাকলেও শেষ বিকালে তা সাগরে ভাসে মাছ শিকারের জন্য। এখান থেকেই অবলোকন করা যায় সাগরে সংগ্রামী জেলেদের জীবনযাত্রা।

গঙ্গামতি সৈকতের বালুকাবেলায় ছোট ছোট লাল কাঁকড়ার খেলা পর্যটকদের জন্য বাড়তি পাওনা। বালুতটে এ লাল কাঁকড়ার লুকোচুরি দূর থেকে দেখলে মনে হবে পর্যটকদের অভ্যর্থনার জন্য যেন সৈকত জুড়ে লাল কার্পেট বিছিয়ে রাখা হয়েছে। তাইতে দেশÑবিদেশের পর্যটকরা বার বার ছুটে আসছে গঙ্গামতি সৈকতে। প্রকৃতি ও সমুদ্রের অপরূপ মিতালী যেন ঘিরে রেখেছে গোটা সৈকতের বালুকাবেলা। যেখানে কৃত্রিমতার কোন ছাপ নেই।

গঙ্গামতি সৈকতের কাছেই মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে শত বছরের পুরানো এশিয়ার বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার। এখানে ঘুরতে এলে উপভোগ করা যায় রাখাইন সংস্কৃতি। যারা এখনও নিজেদের পড়নের কাপড় নিজেরাই বুনে আপন মনে। এ পাড়া সংলগ্ন এলাকায় রাখাইন শিশুদের মাতৃভাষায় শেখার জন্য রয়েছে নিজ সংস্কৃতির স্কুল।

গঙ্গামতি সৈকতে ভ্রমণে আসা ঢাবি’র ছাত্র সুমন, তালিম ও তাদের বন্ধুরা জানান, কুয়াকাটা সৈকতের চেয়েও এ সৈকতের প্রস্থ বেশি। এ সৈকতে ঘুরে বেড়ানো সত্যিই আনন্দের। এখানে মাত্র বালিয়াতলী খেয়া পার হলেই মোটরসাইকেলযোগে এক ঘন্টার মধ্যেই আসা সম্ভব।

গঙ্গামতি সৈকত এলাকায় এখনও পর্যটকদের রাত্রি যাপনের জন্য হোটেল নির্মাণ না হলেও এ সৈকতকে ঘিরে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানি ও ব্যক্তিমালিকানা জমির মালিকরা। ইতিমধ্যে হোটেল-মোটেল নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যেই গঙ্গামতি সৈকত হয়ে উঠবে এক আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.