রতন সিং, দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলায় আমন ক্ষেতে দেখা দিয়েছে কারেন্ট পোকা বা বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণ। এই পোকার আক্রমণ হলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ফসল নষ্ট করে ফেলে। ফলে জেলার কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

চলতি আমন মৌসুমে দিনাজপুর জেলায় ২ লাখ ৫৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে আর এই জেলাসহ পার্শ্ববর্তী পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলে আমন ধান চাষ হয়েছে ৪ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষকদের কঠোর পরিশ্রম আর সঠিক পরিচর্যায় সবুজ সমারোহে পরিণত হলেও হঠাৎ করে কারেন্ট পোকা বা বাদামি গাছ ফড়িংয়ের আক্রমণে বিবর্ণ হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ আমন ধান ক্ষেত।
কৃষকরা জানায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টিপাতের পরপরই এই পোকার আক্রমণ দেখা দেয় আমন ক্ষেতে। সঠিক সময়ে কীটনাশক স্প্রে করে অনেকেই তাদের ফসল রক্ষা করতে পারলেও অনেকের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষক আব্দুল জলিল জানান, এই পোকা কোনো ফসলে আক্রমণ করলে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্ষেতে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে পুরো ফসল নষ্ট করে দেয়। আর আক্রমণের সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও ফলন কমে যায়। তাদের অভিযোগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সঠিক সময়ে তাদের কোনো পরামর্শ প্রদান করেন না। আর তাই সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে তাদের বিলম্ব হয়ে যায়।
দিনাজপুরের সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের বলতৈড় গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেনও একই কথা বলেন। তিনি জানান, এই পোকা কোন ক্ষেতে আক্রমণ করলে এক সপ্তাহের মধ্যেই পুরো ফসল নষ্ট করে ফেলে। সঠিক সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও ফলন কমে যায়।
কৃষক আজিজার রহমান জানান, এই এলাকায় কৃষি কর্মকর্তাদের তেমন একটা পাওয়া যায় না। কোনো ধরনের পরামর্শ নেওয়ার জন্য তাদেরকে কীটনাশক ডিলারদের কাছে যেতে হয়। যদি আক্রমণের আগাম পূর্বাভাস কিংবা আক্রমণের সাথে সাথেই সঠিক পরামর্শ পাওয়া যেতো তাহলে তাদের ফসলের ফলন নিয়ে কোন চিন্তা করতে হতো না।
আতাউর রহমান জানান, তার রোপন করা প্রায় ২ বিঘা (৪৮ শতক) জমিতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এই পোকা আক্রমণ করায় এবারে তাদের ফলন অনেক কমে যাবে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, পোকার প্রকৃত নাম বাদামী গাছ ফড়িং। তবে এই পোকা আক্রমণ হলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ফসল নষ্ট করে বলে কৃষকরা একে কারেন্ট পোকা নামে অভিহিত করেছে। এখন পর্যন্ত যে পোকা ধরেছে তা ক্ষতিকর পর্যায়ে নেই বলে দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিনাজপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জুলফিকার হায়দর আমন ধানে এই পোকার আক্রমণ হয়েছে স্বীকার করে জানান, এখনও এটি নিয়ন্ত্রণ বা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সার্বক্ষণিকভাবে কৃষি কর্মকর্তারা মনিটরিং ব্যবস্থা চালু রেখেছে সব সময় কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।