হাকিম বাবুল, শেরপুর: ‘দয়ার মাতা মারিয়া’ এই মূল সুরের উপর ভিত্তি করে শেরপুরের বারোমারি ধর্মপল্লীতে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের দু’দিনব্যাপী ১৯তম ‘ফাতেমা রাণীর তীর্থোৎসব’ শুক্রবার বেলা ১১ টায় মহাখ্রিস্টযাগের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। মহাখ্রিস্টযাগ বা সমাপনী প্রার্থনায় পৌরহিত্য করেন ময়মনসিংহ খ্রিস্টধর্ম প্রদেশের ধর্মযাজক বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি।
এর আগে সকাল আটটায় তীর্থযাত্রীরা তীর্থযাত্রার অন্যতম অনুষঙ্গ জীবন্ত ক্রুশের পথ পরিভ্রমণ করেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় উদ্বোধনী খ্রিস্টযাগে পাপ স্বীকার ও পুনর্মিলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দু’দিনব্যাপী এ তীর্থোৎসব। রাতে হাজার হাজার ভক্তের অংশগ্রহণে মোমবাতি হাতে আলোর মিছিল তীর্থকেন্দ্রের উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলাপথ অতিক্রম করে। পরে মা-মারিয়ার মূর্তির সম্মুখে স্থাপিত মঞ্চে পাপ স্বীকার, পবিত্র সাক্রামেন্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান ও গীতি আলেখ্যসহ রাতব্যাপী নানা অনুষ্ঠান হয়।
সারাদেশের প্রায় ২৫ হাজার খ্রিস্টভক্ত ছাড়াও এবারের তীর্থোৎসবে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইতালি, ফিলিপাইন, কোরিয়া, ভারতসহ আটটি দেশ থেকে তীর্থযাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন বলে বারোমারি ধর্মপল্লী সূত্রে জানা যায়।
ময়মনসিংহ খ্রিস্টধর্ম প্রদেশের বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি বলেন, পাপমোচন ও মনোবাসনা পূরণের লক্ষ্য দেশ-বিদেশের খ্রিস্টভক্তরা এ তীর্থস্থানে সমবেত হন। এখানে এসে তারা আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন। সৃষ্টিকর্তা বাঁচিয়ে রাখলে আগামী বছর আবার সকলের পুনর্মিলন হবে। এবারের তীর্থোৎসবে সহযোগিতার জন্য তিনি প্রশাসনসহ সকলকে ধন্যবাদ জানান।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কেবল খ্রিস্টভক্তরাই নয়, তীর্থের নানা নান্দনিক দৃশ্য দেখতে বাৎসরিক এ তীর্থোৎসবে নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ আর মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও বারোমারি ধর্মপল্লী ও আশপাশের এলাকায় ভিড় জমান। এ উপলক্ষে ধর্মপল্লী সংলগ্ন মাঠে দু’দিনব্যাপী বারোয়ারি মেলাও বসে। তীর্থ উৎসব উপলক্ষ বারোমারি ধর্মপল্লী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্বেচ্ছাসেবক দল, আনসার, বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ সাদা পোশাকে অনেক নিরাপত্তাকর্মী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়।
১৯৯৮ সালে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লীতে পর্তুগালের ফাতেমা নগরের আদলে ও অনুকরণে ‘ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থান’ স্থাপন করা হয়। সেই থেকে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনব্যাপী তীর্থ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। ধর্মীয় চেতনায় দেশি-বিদেশি হাজার হাজার খ্র্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর বার্ষিক তীর্থোৎসব পালিত হওয়ায় বর্তমানে এটি আন্তর্জাতিক মহাতীর্থ স্থানের রূপ পেয়েছে।