নার্সারি করে সফল ওমর শরীফ একটি দৃষ্টান্ত গড়েছেন

আব্দুল্লাহ আবু এহসান, মধুপুর (টাঙ্গাইল): টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে নার্সারি করে হতদরিদ্র ওমর শরীফ পেয়েছেন ব্যাপক সাফল্য। পেয়েছেন সুখের ঠিকানা। ৩২ বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন বিশাল নার্সারি। প্রজাতির সংখ্যা দিন দিন বাড়িয়ে তিনি ৩০০ প্রজাতির সমৃদ্ধ ভাণ্ডার গড়ে তুলেছেন। থেমে নেই জাত সংগ্রহও। কোনও গাছ বা প্রজাতির নাম শুনলেই তিনি ছুটে যান, সংগ্রহ করে আনেন প্রজাতি।

29-10-2016
নিজ নার্সারিতে বাগানের চর্চা করছেন ওমর শরীফ।

মধুপুর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অরণখোলা ইউনিয়নের কাকরাইদ গ্রামে গিয়ে কথা হয় নার্সারির মালিক ওমর শরীফের সাথে। তিনি জানান, এক সময় তিনি ছিলেন হতদরিদ্র। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হতো। সংসারে ছিল নিত্য অভাব অনটন। ছিল না কোনও কর্মসংস্থান।
১৯৮৮ সালের কথা। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকা স্থানীয় জলছত্র, কাকরাইদসহ বিভিন্ন এলাকার ৪৬ জনকে নার্সারির উপর প্রশিক্ষণ দিবে শুনে তিনি এগিয়ে যান। বনায়ন বা নার্সারির উপর প্রশিক্ষণ নেন। শিখেন কিভাবে নার্সারি করে চারা উৎপাদন করা যায়। তিন দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ১৭০ টাকা ভাতা পান। এই টাকা দিয়েই শুরু করেন নার্সারি। পরে প্রশিকা তাকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেয়।

শরীফ বাড়ির চারপাশে বড় পরিসরে শুরু করেন নার্সারি। সে বছর রাস্তার দু’পাশে গাছ লাগানোর জন্য শরীফের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকার চারা কেনে প্রশিকা। এছাড়া আরো ৭০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করেন তিনি। লাভ হয় ৯০ হাজার টাকা। পরের বছর ২৫ মাইল নামক স্থানে আরো জমি নিয়ে বড় করেন নার্সারি। পরে কন্যা সন্তানের জন্মের পর ওমর শরীফ মেয়ের নামে নার্সারির নাম রাখেন সুমী নার্সারি। এভাবে ধীরে ধীরে বাড়ান জমি। বাড়ে নার্সারি। এগিয়ে যায় তার নার্সারি।

এক দশকের ব্যবধানে সুমী নার্সারির নাম ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন কৃষিমেলায় স্টল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে চারা বিতরণ ও দুর্লভ চারা উৎপাদন করে তিনি জেলায় সুনাম অর্জন করেন। ২৮ বছরের ব্যবধানে ২৫ মাইল জায়গা সংকুলান না হওয়ায় কাকারাইদ টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে নার্সারি বাড়ান তিনি। এখন যে কোনও জাতের চারা উৎপাদন করতে কোন সমস্যা হয় না। সব মিলিয়ে ৩২ বিঘা জমির উপর তার বিশাল নার্সারি। তার নার্সারিতে ২৫ জন শ্রমিক দৈনিক কাজ করে।
শরীফ জানান, নার্সারি করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। এজন্য তিনি ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। মৌসুম শেষে টাকা পরিশোধ করেন এবং কাজের সময় ঋণ নেন। কোন সমস্য হয় না। তার নার্সারিতে দেশি-বিদেশি আম বারি-৪, কিউজাই, দামভোল, মাই, বেনানা আম, ফোরকেজি, আলফানসো, হানিকিউ, ছোয়ানছো, থালান, সূর্যডিম, তোতাপুরি, থাইকোষমিঠা, চুকানান, থাইজাম্বুরা আম, গেড়িমতি, থাইল্যান্ড, আমেরিকা পালমাল, আমেরিকা সুন্দরী, আমরুপালিসহ প্রায় ৫০ জাতের দেশি-বিদেশি আমের চারা রয়েছে।

এছাড়াও জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, থাইলিচু, রামভুটান, এবেকাডো, আলুবোলেরা, জামালফল, সাতকরা, তৈকর, থাইসেভেন পেয়ারা, লটকন, বহেরা, আমলকি, কদবেল, সেকলেছলেবু, জামরুল, থাইমিষ্টিতেঁতুল, বেদেনা, ডালিম, পাকিস্তানি মালটা, আপেল, সাদা আপেল, কমলা, নাসপাতিসহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির ফলের চারা রয়েছে। অপরদিকে শোভাবর্ধন গোলাপ, রঙ্গন, বেলি, চার ধরনের জবা, জুঁই, থালতি, টগর, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, বাগানবিলাস, সাদা জিনিয়া, কসমস, সূর্যমুখী, চায়না টগর, পাতাবাহারসহ প্রায় ১০০ প্রজাতির ফুলের চারা উৎপাদন করেন তিনি।
ওমর শরীফ মধুপুর শহরে জমি  কিনে গড়ে তুলেছেন পাকাবাড়ি। জলছত্রে জমি কিনে বাসা করে ভাড়া দিয়েছেন। জেলার মানুষ সুমী নার্সারির ওমর শরীফকে এখন চেনেন। তিনি টাঙ্গাইল জেলা নার্সারি মালিক সমিতির সহ-সভাপতি, নার্সারি উন্নয়ন সংস্থা মধুপুরের দীর্ঘদিনের সভাপতি। ট্রাক ড্রাইভার্স, কিন্ডার গার্টেন, এতিমখানা, বাজার সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত। মেয়েকে এমএ পাশ করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে অর্নাসে পড়ে।

ওমর শরীফ জানান, তিনি পরিবেশের জন্য কাজ করতে চান। দেশি প্রজাতির চারা লাগানোর পরামর্শ তার। দেশি প্রজাতির ফলের গাছ লাগালে একদিকে পুষ্টি পাবে জনগণ অন্য দিকে অর্থ ও কাঠ দুইই আসবে। তিনি সুন্দর ফুল-ফল দিয়ে দেশকে ভরে দিতে চান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.