মিজানুর রহমান আকন, বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোল্লাহাটে স্বামীকে বাঁচাতে ধর্ষকের তলোয়ারের কোপে গৃহবধূর পা কেটে ফেলা ও বিনা চিকিৎসায় ১৫ দিন বন্দী করে রাখার ঘটনার পক্ষকাল পরেও ধর্ষণের মামলা রেকর্ড না করায় ওই এলাকায় সংখ্যালঘুসহ সর্ব্বস্তরের সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

দ্রুত ধর্ষণ মামলা রেকর্ড এবং ধর্ষক সোবাহান মোল্লার ফাঁসির দাবিতে রবিবার দুপুরে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। উপজেলা চুনখোলার ইংরেজ বাজারে ঘন্টাব্যাপী এই মানববন্ধনে রাজনৈতিক দলের নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এসময় বক্তব্য দেন, মোল্লাহাট উপজেলা শ্রমিক লীগের আহবায়ক কাজী কেরামত আলী, সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মনির মুন্সি, শ্রমিক নেতা আবুল বাশার শিকদার, ডা. সুকুমার চিন্তাপাত্র, মাহবুবুর রহমান মোল্লা, শান্তি রাম মন্ডল, সাবিত্রী চৌধুরি, সাবেরা বেগম, প্রকাশ মজুমদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, লম্পট চরিত্রের সোবাহান মোল্লা সংখ্যালঘু গৃহবধূকে পৈশাচিক নির্যাতনের পর তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করলেও পুলিশ যোগসাজশে অপরাধীকে বাঁচাতে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে হামলা ও জখমের মামলা রেকর্ড করেছে, যা অত্যন্ত নিন্দার, এটি মানবাধিকারেরও চরম লঙ্ঘন। আজও সোবাহান মোল্লা আটক না হওয়ায় বক্তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অবিলম্বে প্রকৃত ঘটনায় মামলা রেকর্ড এবং অপরাধীকে দ্রুত আটক ও ফাঁসির দাবি করেন তারা।
এর আগে মোল্লাহাটে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শোলাবাড়িয়া গ্রামের এক সংখ্যালঘু পরিবারের দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূর উপর প্রতিবেশী সোবাহান মোল্লা ভয়ভীতি দেখিয়ে দিনের পর দিন পাশবিক নির্যাতন চালায়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ঘরে ঢুকে আবারও নির্যাতন চালাতে গেলে তার স্বামী বাধা দেয়। তখন তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সোবাহান মোল্লা কোপ দেয়। স্বামীকে বাঁচাতে গেলে ধর্ষকের তলোয়ারের কোপে গৃহবধূর পায়ের কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপরেও তাকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেয়।
নৃশংস এ ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে ধর্ষককে রক্ষার জন্য প্রভাবশালী একটি মহল অপতৎপরতা শুরু করে। অর্থ এবং প্রভাব বিস্তার করে তারা বর্বরতার শিকার ওই গৃহবধূকে ‘নষ্ট চরিত্রের’ এবং ‘অনৈতিক সম্পর্ক ছিল’ বলে প্রচার করার চেষ্টা করে। তারা নিরীহ ওই পরিবার এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন ও সহায়তাকারীদের ভয়ভীতি দেখায়। যোগসাজশে থানা পুলিশ গত ১৩ অক্টোবর ধর্ষণের মামলা না নিয়ে দস্যুতা ও হত্যাচেষ্টার মামলা রেকর্ড করে। ‘মহিলার স্বামী ধর্ষণের মামলা দেয়নি’, ‘ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি’ ইত্যাদি বলে প্রচার করে। এমনকি এ বিষয়ে বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্ট নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্ট করে এ মহলটি।