ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর এবং মন্দির ধ্বংসের ঘটনায় ঈশ্বরদী, দিনাজপুর, বাগেরহাট, শেরপুর, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধন থেকে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা, পুলিশ ও প্রশাসনের দায়িত্বহীন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি অর্থায়নে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বাড়ি ঘর মন্দির পুন:নির্মাণসহ যথাযথ ক্ষতি পূরণ প্রদান এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আস্থার পরিবেশ তৈরির জন্য জোরালো রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়। বাগেরহাটে বক্তারা মন্ত্রী ছায়েদুল হকের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান এবং তার পদত্যাগ দাবি করেন।
নাসিরনগরে হামলার প্রতিবাদে ঈশ্বরদীতে মানববন্ধন সমাবেশ
স্বপন কুমার কুন্ডু, ঈশ্বরদী (পাবনা): ঈশ্বরদী শহরের প্রাণকেন্দ্র বাজারের এক নম্বর গেটের সামনে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের একটি মানববন্ধন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের তিন শতাধিক বাড়িতে একযোগে হামলা, ভাংচুর এবং মন্দির ধ্বংসের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করা হয়েছে।
রাষ্ট্র ও সমাজের ক্রমাগত সাম্প্রদায়িকীকরণ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখলের জন্য এক শ্রেণির মানুষের লোভকে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের মূলকারণ হিসেবে বক্তারা চিহ্নিত করেন। পূজা উদ্যাপন পরিষদের ঈশ্বরদী শাখার সভাপতি সুনিল চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য রাখেন, ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন কুমার কুন্ডু, পূজা উদ্যাপন পরিষদের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি রমেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ঈশ্বরদীর সাধারণ সম্পাদক বিমল চক্রবর্তী, পূজা উদ্যাপন পরিষদের উপজেলা শাখার সম্পাদক গনেশ সরকার, সহ-সভাপতি কমল কর্মকার, পৌর কমিটির সভাপতি বাবু পান্ডে, সম্পাদক অনন্ত কর্মকার প্রমুখ।
এ সময় সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, শিল্প ও বণিক সমিতির নেতা শফিকুল ইসলাম বাচ্চু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক জহুরুল ইসলাম পুনো, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সম্পাদক ইমরুল কায়েস দারা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপজেলা সভাপতি কবির আলী হিরু এবং পৌর কমিটির সভাপতি আলাউদ্দিন বিপ্লব।
বক্তারা বলেন, একের পর এক এরকম ঘটনা ঘটিয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে এদেশে জঙ্গি-তালেবানি স্টাইলের রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই এসব হামলার মূল উদ্দেশ্য।
মানববন্ধন থেকে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা, পুলিশ ও প্রশাসনের দায়িত্বহীন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি অর্থায়নে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বাড়ি ঘর মন্দির পুন:নির্মাণসহ যথাযথ ক্ষতি পূরণ প্রদান এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আস্থার পরিবেশ তৈরির জন্য জোরালো রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়।
নাসিরনগরে হামলার ঘটনায় দিনাজপুরে মানববন্ধন প্রতিবাদ সমাবেশ
রতন সিং, দিনাজপুর: নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে দিনাজপুরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদ্যাপন পরিষদ।
শুক্রবার সকালে দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমির সামনের সড়কে ব্রাহ্মবাড়িয়ার নাসিরনগরে সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে হামলা, নাশকতা ও লুটপাটের ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদ্যাপন পরিষদ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন।
বক্তারা ন্যাক্কারজনক ও অমানবিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, প্রশাসন ও সরকার দলীয় নেতাদের প্রশ্রয়-ইন্ধনে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালানো হয়। অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বক্তব্য রাখেন ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন, সাধারণ সম্পাদক পরিমল চক্রবর্তী তপন, পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব বিধান চক্রবর্তী বাসু, প্রেমনাথ রায়, স্বরূপ বকসী বাচ্চু, রতন সিং, ছবি সিনহা, উত্তম কুমার রায়, বিভাষ বিশ্বাস, বিজয় কৃষ্ণ কুন্ডু, গৌরাঙ্গ রায় এবং অরুন সরকার।
বাগেরহাটে সমাবেশ ও মানববন্ধন ॥ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগ দাবি
বাগেরহাট প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মন্দির, প্রতিমা ও সংখ্যালঘুর বাড়ি-ঘরে হামলা-ভাংচুরের প্রতিবাদে শুক্রবার বাগেরহাট শহরের সাধনার মোড়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শিব প্রসাদ ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এ সময় বক্তব্য দেন, মিলন কুমার ব্যানার্জী, অমিত রায, অবনীশ চক্রবর্তী সোনা, মীর ফজলে সাঈদ ডাবলু, কাজী মুকিত ঝন্টু, এ্যাড: রামকৃষ্ণ বসু, শরীফা হেমায়েত, মীর্জা আলী হাসান খোকন, স্বপন দাস, মধুসুধন দাস, নিমাই সেন, সুমনা রায়, বাবলা হালদার, প্রেমানন্দ মৃধা, উদয় শঙ্কর গাঙ্গুলী, দিলীপ বালা, অসীম দাস, স্বপন বিশ্বাস, বাবুল সরদার প্রমুখ।
বক্তারা মিথ্যা প্রচার চালিয়ে পরিকল্পিত বর্বর ওই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। তাঁরা মন্ত্রী ছায়েদুল হকের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান এবং তার পদত্যাগ দাবি করেন।
মন্দির ভাংচুর-সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে শেরপুরে মানববন্ধন
হাকিম বাবুল, শেরপুর: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও হবিগঞ্জের মাধবপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা-লুটতরাজ ও মন্দির ভাংচুরের প্রতিবাদ ও দোষীদের বিচারের দাবিতে শেরপুরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ শেরপুর জেলা শাখার আয়োজনে শুক্রবার শহরের রঘুনাথ বাজার টাউন হলের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সকালে ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে একাত্মতা ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিট কমান্ড, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, উদীচী জেলা সংসদ, জনউদ্যোগ, প্রেসক্লাব, খেলাঘরসহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধন চলাকালে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু সালেহ মো. নূরল ইসলাম হিরু, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ সভাপতি সাংবাদিক দেবাশীষ ভট্টাচার্য, সেক্টর কমার্ন্ডাস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আখতারুজ্জামান, পাতাবাহার খেলাঘর আসরের সভাপতি অধ্যাপক শিব শংকর কারুয়া, উদীচী জেলা সভাপতি তপন সারোয়ার, জনউদ্যোগ আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, মুক্তিযোদ্ধা তালাপতুপ হোসেন মঞ্জু, মানবাধিকার সংগঠক অ্যাডভোকেট প্রদীপ দে কৃষ্ণ, হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নরেশ চন্দ্র দে, পুরোহিত কল্যাণ পরিষদের সভাপতি শিক্ষক বিপুল চক্রবতী, সংস্কৃতিকর্মী মলয় চাকী প্রমুখ।
সভায় বক্তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও হবিগঞ্জের মাধবপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে হামলা- লুটতরাজ ও মন্দির ভাংচুরের ঘটনাকে বর্বরোচিত উল্লেখ করে বলেন, এ ঘটনা জাতিকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। তাঁরা বলেন, ইসলাম ধর্ম অমুসলিমদের জানমাল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হেফাজত করার শিক্ষা দেয়, ধ্বংস করার শিক্ষা দেয় না। পবিত্র কোরআনে এসব কাজ অগ্রণযোগ্য বলে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। কোন প্রকৃত মুসলমান এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পারেনা। যারা ফেসবুকে বাজে ছবি পোষ্ট করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তদন্ত করে এর সাথে জড়িত প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে ঝিনাইদহে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে ও দোষী ব্যাক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঝিনাইদহে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে শহরের পেষ্ট অফিস মোড়ে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্ট্রান ঐক্য পরিষদ এবং পূজা উদযাপন পরিষদ এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে অংশ নেন হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্ট্রান ঐক্য পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুবীর কুমার সোমার্দ্দার, কেন্দ্রীয় পূজা উদ্যাপন পরিষদের সহ-সভাপতি কনক কান্তি দাস, প্রচার সম্পাদক বিনয় কৃষ্ণ বিশ্বাস, সদর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পষিদের সভাপতি প্রফুল্লহ কুমার সরকার, ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রসেন্জিৎ ঘোষ শিপন, সাধারণ সম্পাদক পলাশ কুমার বিশ্বাসসহ জেলা বিভিন্ন পেশার অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ সারাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন,নিপীড়ন, মন্দিরে হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানান। অবিলম্বে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।