অবৈধ টোল আদায়ের কারণে হকারমুক্ত হচ্ছে না খুলনা মহানগরীর ফুটপাত

খুলনা প্রতিনিধি: খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন ফুটপাত থেকে দোকান সরিয়ে নেয়ার জন্য একদিকে চলছে মাইকিং, অন্যদিকে খোদ সিটি কর্পোরেশনের রশিদ দিয়ে এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈধ টোল আদায় করছে। এই অবৈধ টোল আদায়ের কারণেই ফুটপাতেই থেকে যাচ্ছে অবৈধ দোকান-পাট। আর সেই সাথে প্রতিদিন পকেট ভারি হচ্ছে কেসিসি’র কিছু কর্তাব্যক্তির। যার পরিমাণ প্রতি মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। যদিও সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন এধরনের টোল আদায়ের কোন নিয়ম নেই। যদি কেউ সেটা করে থাকে তারা অসাধু কর্মচারী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নগরীর বিভিন্ন রাস্তার ফুটপাতে রয়েছে অসংখ্য হকারদের দোকান। চায়ের ষ্টল, ফলের দোকান, মুদীদোকান, কসমেটিক্স, কাঁচা মাল, কাপড়ের দোকানসহ বিভিন্ন প্রকারের মালের দোকান। খুলনা মহানগরীর প্রবেশ দ্বার হিসেবে পরিচিত গল্লামারী ব্রিজ পার হয়েই রাস্তার দু’পাশে, রূপসা ঘাট, শিববাড়ী মোড়, রেলওয়ে মার্কেট, ডাকবাংলা মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, শান্তিধাম মোড়, বড় বাজারসহ নগরীর সর্বত্র ফুটপথে রয়েছে হকারদের দোকান।

এসব এলাকার হকারদের উপর কোথাও সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ আবার কোথাও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ক্ষমতাধর ব্যক্তির আধিপত্য রয়েছে। যে কারণে সিটি কর্পোরেশন মাইকিংয়ের মাধ্যমে হকার উচ্ছেদের চেষ্টা করলেও প্রভাবশালী ব্যক্তির জোরে উচ্ছেদ সম্ভব হয়না। বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে ভ্রাম্যমান আদালত চালিয়ে এসব হকারদের জরিমানার আওতায় আনা হয়। ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিশ চলে যাবার পরই প্রভাবশালী ব্যক্তির হুকুমে আবারও হকাররা সেখানেই দোকান নিয়ে বসে যান। মাঝখানে বেশকিছু টাকা তাদের জরিমানা দিতে হয়।

নগরীর ফুটপাত এবং বড় বাজারে রাস্তার উপরের দোকান মালিকরা জানান, হেলাতলা মোড়ের পাশে চিড়ার দোকান, ফলের দোকান, বড় বাজারের বিভিন্ন কাঁচা মালের দোকান, চাল, ডাল, চিনি, খেজুর, ডিম, পিয়াজ, রসুন, মুরগীসহ বিভিন্ন প্রকারের ছোট বড় দোকান থেকে সিটি কর্পোরেশনের লোকেরা প্রতিদিন রশিদ দিয়ে অবৈধ টোল আদায় করে থাকে। এসব দোকান আবার কিছু কিছু রিক্সাভ্যানের উপর থাকে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ছোট আকারের দোকান প্রতি ১০ টাকা, মাঝারি দোকান থেকে ২০ টাকা, একটু বড় দোকান হলে ৪০-৫০ টাকা আদায় করেন।

দোকান মালিকরা বলেন, ছোট বড় মাঝারি দিয়ে নগরীতে প্রায় দু’হাজার দোকান থেকে সিটি কর্পোরেশন রশিদ দিয়ে এই টোল আদায় করে থাকে। ভুক্তভোগী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকান মালিক একটি রশিদ দেখিয়ে বলেন, ২ হাজার দোকান হলে গড়ে বিশ টাকা করে আদায় হলেও প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা আদায় হয়। একটি রশিদে ‘বই নম্বর ৬৯, রশিদ নম্বর ১৩৭০ খুলনা সিটি কর্পোরেশন, পাইকারী ও খুচরা টোল আদায়ের রসিদ, খাজনা/টোলের পরিমাণ ১০ টাকা মাত্র’ লেখা রয়েছে। তার নিচেই রয়েছে আদায়কারীর অস্পষ্ট স্বাক্ষর এবং তারিখ। ছোট বড় দোকান হিসেবে রশিদে টাকার পরিমাণও ছোট বড় দেয়া রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফ নাজমুল হাসানের নিকট মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন শুধুমাত্র বাজারের চান্দিনায় যে সব দোকান বসে তাদের নিকট থেকে রশিদ দিয়ে টোল আদায় করে থাকে। ফুটপাতের দোকান থেকে টোল আদায়ের কোন নিয়ম নেই। আপনার নিকট কোন রশিদ থাকলে ফটোকপি করে দিবেন। কে আদায় করছে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, সিটি কর্পোরেশন ফুটপাতের দোকান মালিকদের নিকট থেকে রশিদ দিয়ে টোল আদায় করলে সেটা এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.