সোহরাব হোসেন, পটুয়াখালী: প্রায় পাঁচ বছর ধরে সচল করা যাচ্ছে না পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র সিসমোগ্রাফ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়কারী একমাত্র এ যন্ত্রটি দীর্ঘ ৫৭ মাস ধরে অচল রয়েছে। ফলে জানা যাচ্ছে না এ অঞ্চলের ভূমিকম্পের মাত্রা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত একটি চুক্তির আওতায় দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং দুটি জেলা শহরে স্থায়ীভাবে এই সিসমোগ্রাফি যন্ত্র স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ঢাবির ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখ্তার।
চুক্তির আওতায় অনুদান হিসেবে পাওয়া একটি সিসমোগ্রাফি যন্ত্র ২০০৩ সালে প্রথম ঢাবি ক্যাম্পাসে স্থাপন করা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট এবং কাপ্তাইয়ে স্থাপন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০ সালের অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে এ যন্ত্রটি স্থাপিত হওয়ার পর দুটি ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয় করা সম্ভব হয়। কিন্তু ২০১১ সালের জানুয়ারিতে যন্ত্রটিতে সমস্যা দেখা দিলে একাডেমিক ভবনে আন্ডারগ্রাউন্ড চেম্বারের সঙ্গে ইন্টারনেটের পূর্ণাঙ্গ সংযোগসহ ভূকম্পন পরিমাপক যন্ত্রটি চালু করা হয়। কিন্তু চালুর এক বছর না যেতেই আবারও নষ্ট হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূ-কম্পনের ফলে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, সার্ফেস এবং রিলে ওয়েভ ছড়িয়ে পড়ে। চারটি ওয়েভ একসঙ্গে বের হলেও প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি ওয়েভ ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। সার্ফেস এবং রিলে ওয়েভ পাওয়ার এক-দুই মিনিট আগে এই সতর্কবার্তা পাওয়া সম্ভব। যদি ২৪ ঘণ্টা এ যন্ত্র মনিটর করা হয় তাহলে জনগণকে ভূমিকম্প সম্পর্কে অবহিত করার পাশাপাশি জানমালের ক্ষতি অনেক কমানো সম্ভব। এছাড়া এই যন্ত্রের অংশ বিশেষ (প্লেট) মাটির নিচে থাকে। এই প্লেটের সাহায্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ভূমির অবস্থান নির্ণয় করা হয়। অর্থাৎ ভূমির অবস্থান ওপরে উঠছে, নাকি নিচে নামছে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ভূকম্পন পরিমাপক যন্ত্রটি ৫৭ মাস ধরে অচল থাকায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে প্রায় চার কোটি মানুষ।
যন্ত্রটির ব্যাপারে জানতে চাইলে সিসমোগ্রাফ এটির অপারেটিংয়ের দায়িত্বে থাকা পবিপ্রবির সিএসই অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মো. মুনীবুর রহমান জানান, সিসমোগ্রাফটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রজেক্টের আওতাধীন হওয়ায় তারাই এ ব্যাপারে ভাল বলতে পারবেন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখ্তার এ প্রতিবেদককে জানান, যন্ত্রটি পবিপ্রবি ক্যাম্পাসের যেখানে স্থাপন করা হয়েছে সে স্থানটি খুবই নয়েজি এবং পাওয়ার সাপ্লাইয়ে সমস্যা থাকার কারণে এটি অচল হয়ে আছে। এ সময় তিনি আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে পবিপ্রবিতে এসে সিসমোগ্রাফ যন্ত্রটি আবার সচল করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।