আব্দুল্লাহ আবু এহসান, মধুপুর (টাঙ্গাইল): অভাব অনটন ও বাল্য বিয়ের কারণে গত ৩ বছরে শুধু মধুপুর উপজেলাতেই ঝরে পড়েছে প্রায় দুই হাজার শিশু শিক্ষার্থী। ২০১৩ সালের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমাপনী পরীক্ষা থেকে শুরু করে গত ১ নভেম্বর শুরু হওয়া অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা পর্যন্ত টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার প্রায় দুই হাজার শিশু শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে মধুপুর উপজেলার প্রাথমিক স্তরের পঞ্চম শ্রেণিতে ৫ হাজার ৪৮ জন শিক্ষার্থী ডিআরভুক্ত হয়েছিল। যেখানে মেয়ে ছিল ২ হাজার ৬৫৪ এবং ছেলে ছিল ২ হাজার ৩৯৪ জন। কিন্তু ২০১৩ সালের সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪ হাজার ৭৮২ শিক্ষার্থী। ঝরে পড়ে ২৬৬ জন। একই শিক্ষা বর্ষে ছেলে ৩৯৪ ও মেয়ে ৪০৬ জন মিলে মোট ৮০০ শিশু শিক্ষার্থী ডিআরভুক্ত হয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৬৬২ জন। পরীক্ষার আগেই ১৩৮ জন ছিটকে পড়েছে শিক্ষা জীবন থেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে উপজেলার ৩৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ৫০৫ জন ডিআরভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষা দিচ্ছে ৩ হাজার ৪২৮ জন। মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রাণী ভবানী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও শোলাকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় এই তিনটি কেন্দ্রে যথাক্রমে ১২, ১৪ ও ৮ টি বিদ্যালয়ের উল্লিখিত সংখ্যক শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। রাণী ভবানী কেন্দ্রে ৩৬ জন অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৬ জন, শহীদ স্মৃতি কেন্দ্রে অনুপস্থিত ১৬ জনের ১২ জন এবং শোলাকুড়ি কেন্দ্রে অনুপস্থিত ২৫ জনের ১৫ জনই মেয়ে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে অনুপস্থিত এই ৫৪ মেয়ের প্রায় সবারই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তারা পরীক্ষা থেকে বিরত রয়েছে এবং তাদের স্থান হয়েছে শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ার তালিকায়।
এদিকে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও গোলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ফাতেমা, আয়েশা, ভবানীটেকি উচ্চ বিদ্যালয়ের কামিনী, বোকারবাইদ এইচবি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আরজিনা, সালমাসহ বেশ কয়েকজন বালিকা নববধূ পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। ছেলেদের মধ্যে অনেকে পারিবারিক অভাব অনটনে কাজে লেগে যাওয়ায় ঝরে গেছে। মেয়েদের মধ্যেও গার্মেন্টেসে কাজ নিয়ে এলাকা ছাড়ায় পরীক্ষা দিচ্ছে না অনেকেই।
অন্যদিকে মধুপুর আদর্শ ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে ২০ টি মাদরাসার ৬৮৫ জনের মধ্যে পরীক্ষা দিচ্ছে ৬৫৫ জন। অনুপস্থিত ৩০ জনের ২৫ জনই মেয়ে। যাদের বেশির ভাগই বিয়ে হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও পরীক্ষা দিচ্ছে কমপক্ষে ১০ জন শিক্ষার্থী। ঝরে পড়ার এ হারকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বজলুর রশীদ খান চুন্নু। মধুপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এএইচ এম রেজাউল করিম জানান, সরকারের উপবৃত্তি প্রকল্পসহ নানা প্রকল্প থাকার পরও এমন চিত্র নিসন্দেহে উদ্বেগজনক। সংশ্লিষ্টদের আরও সক্রিয় হতে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের সচেতনতা বাড়াতে আরও উদ্যোগী হতে হবে বলেও তিনি স্বীকার করেন।