রবিউল হাসান রবিন, কাউখালী (পিরোজপুর): পরিবেশ ও বনমন্ত্রী এবং জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, আমরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ নদী ও জীবনের সাথে অভিযোজনের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকি। নদীভাঙ্গন-জলোচ্ছ্বাসকে মোকাবেলা করে উপকূল ও সাগরতীরের মানুষ জীবন সংগ্রামে ব্যাপৃত বলে এ এলাকার মানুষের সমস্যা, চাহিদা ও জীবিকা নির্বাহের প্রকৃতি ভিন্ন। দেশের অন্য অঞ্চলের চেয়ে এ ভিন্নতাকে আমলে এনেই তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য আমাদের আলাদাভাবে চিন্তা করতে হয়। তিনি শুক্রবার বিকালে পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার সয়না-রঘুনাথপুর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী উত্তর রঘুনাথপুরে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এখানকার মানুষ নিত্যদিন প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছে। গ্রামের রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, বাধ এমনকি বাগান-খাল-পুকুরও নদী গ্রাস করে। নদীভাঙ্গনে সর্বস্বান্ত মানুষের অভিযোগের কথা বলার জায়গাও থাকে না। তিনি বলেন, এসব দুর্গত মানুষের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অভিযোগ পাওয়া যায় নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদাররা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছেন। কেন্দ্র থেকে যে প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দ আসে তা উপজেলা হয়ে ইউনিয়ন-ওয়ার্ড- গ্রামের মানুষের কাছে সামান্যই পৌঁছে। এইসব প্রবণতার বিরুদ্ধে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সর্বস্তরে মানুষের সচেতন থাকা উচিত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ হওয়ায় এ অঞ্চলের জন্য তিনি যখনই ক্ষমতায় এসেছেন তখনই আমরা নানাভাবে ভাগ্য পরিবর্তনের প্রচেষ্টা গ্রহণের সুযোগ লাভ করেছি। এখন সবচেয়ে যে বড় কাজটি তিনি করছেন তা হলো পদ্মাসেতু নির্মাণ। যার সুফল এ অঞ্চলের মানুষ সদ্ব্যবহারের মধ্যদিয়ে নিজেদের ভাগ্য নির্মাণ করতে সক্ষম হবে। ৯৬’সালে তাঁর সরকারের আমলে দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়, যা বর্তমানে আরও বেগবান হয়েছে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, মনে রাখতে হবে আমাদের দেশ কেন, কোন দেশেই সরকারের একার পক্ষে সকল কাজ করা সম্ভব নয়। তাই সর্বস্তরে নিজ নিজ অবস্থান থেকে উন্নয়ন কাজে সকলকে সক্রিয় অবদান রাখতে হবে। মন্ত্রী জগদ্ধাত্রী পূজা উপলক্ষে আয়োজিত এখানকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশে আগত মানুষের মঙ্গল কামনা করে বলেন, আমরা সবাই মিলে সুখে-শান্তিতে ভালো পরিবেশে বসবাস করার জন্য সচেষ্ট থাকবো।
সমাবেশের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফাও’র প্রতিনিধি মাইক রবসন এ সময় তাঁর বক্তব্যে এ এলাকার সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ দেশের কৃষি সম্ভাবনাময় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সাথে কথা বলার জন্য তাঁর আমন্ত্রণে দু’দিনের সফরে এখানে তাঁরা এসেছেন। সরকার দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করছেন।
সরকারের কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনে বিশেষ প্রচেষ্টা নিয়েছেন। সরকার ও কৃষিমন্ত্রীর এই আগ্রহকে সফল করতে ‘ফাও’ যে প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রণয়ন করছে সেখানে এলাকার কৃষকসহ সংশ্লিষ্টদের মতামতের যাতে যথাযথ প্রতিফলন ঘটে তার জন্য সরেজমিনে সকলের সাথে মতবিনিময় করা হবে। নদীভাঙ্গনসহ কৃষকের স্বার্থানুকূল বিভিন্ন কাজ করতে তারা প্রচেষ্টা নেবেন বলে ‘ফাও’ প্রতিনিধি জানান। সমাবেশে আগত নারী-পুরুষ-শিশুদের উষ্ণ অভ্যর্থনার স্মৃতিকে তিনি দীর্ঘদিন মনে রাখবেন উল্লেখ করে তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।
এ সমাবেশের সভাপতি সয়না-রঘুনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাইদ মিয়া মনু অতিথিদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য দেন। সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ফাও’র সহকারী প্রতিনিধি নূর আহমেদ খোন্দকার পিএইচডি, ফাও’র সহকারী প্রতিনিধি (প্রশাসন) একরামুল হক, কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আহসান কবির, ইউএনও লাবনী চাকমা প্রমুখ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি-জেপি’র কাউখালী উপজেলা সভাপতি মাহবুবুর রহমান খান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মিঠু, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা ইয়াসমিন পপি, কাউখালী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রশীদ মিল্টন, শিয়ালকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার সিকদার, আমরাজুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা চাঁদ, কাউখালী উপজেলা জেপি’র সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম নসু প্রমুখ। অতিথিবৃন্দ ঢাকা থেকে স্পিডবোটযোগে উত্তর রঘুনাথপুর পৌঁছলে গ্রামবাসী তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।