আব্দুল্লাহ আবু এহসান, মধুপুর (টঙ্গাইল): মধুপুর উপজেলার গড় এলাকায় আনারস ও কলার পাতা থেকে প্রাকৃতিক আঁশ ও সূতা উৎপাদন করে পরিবেশসম্মত পোষাক ও হস্তশিল্প উৎপাদনের মাধ্যমে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
১৯৪২ সালে বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ইদিলপুরের আদিবাসি গারো সনাতন মৃ মেঘালয়ের গাছোয়া থেকে প্রথম আনারস চারা নিয়ে আসেন। মধুপুরের ইদিলপুরের উঁচু জমিতে আনারস আবাদ শুরু হয়। সেই থেকে বিস্তৃত হয়ে বর্তমানে মধুপুর ছাড়াও গড় এলাকার মুক্তাগাছা, ফুলবাড়ীয়া ও ঘাটাইল উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে আনারস আবাদ হয়।
এছাড়া এ গড়ে প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে কলার আবাদ হয়। বাগান হতে ফল সংগ্রহের পর বিপুল পরিমাণ আনারস, কলার পাতা ও কান্ডবর্জ্য হিসাবে ফেলে দেয়া হয়। গোখাদ্য হিসেবে পাতার কিছু ব্যবহার থাকলেও বস্তুত বাকি অংশ কোনো কাজে আসেনা। তবে এ ফলজাত বর্জ্য নিয়ে এখন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে। প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবহারে সম্পদে পরিণত করার মধ্যদিয়ে সে সম্ভাবনা আরও উজ্জল হচ্ছে। এ উদ্ভাবন ও বিকাশে দারিদ্র বিমোচনের পথও খুলে যেতে পারে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিস সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় তৃণমূল পর্যায়ে ‘বাংলাদেশ ইন্সস্পায়ার্ড’ নামক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। মধুপুর উপজেলার গড় এলাকাকে এর ফোকাস পয়েন্ট হিসাবে বাছাই করেছে। এ এলাকার উৎপাদিত আনারসের পাতা ও কলাগাছের বর্জ্য হতে আঁশ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত এবং উৎপাদিত আঁশ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরির কৌশল, দক্ষতা অর্জন এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নসহ পণ্য বাজারজাতকরণ ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা ও জ্ঞান লাভ এ প্রশিক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য। “কৃষিজ বর্জ্য হতে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক আঁশ থেকে উৎপন্ন পণ্যের মান উন্নয়নের মাধ্যমে নারীদের আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়ন” নামের এ প্রকল্প বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিডব্লিউসিসিআই) পরিচালনা করছে।
মধুপুর উপজেলার জলছত্র কার্যালয়ের উৎপাদন কেন্দ্রে নির্বাচিত ৫০০ গ্রামীণ নারী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। প্রশিক্ষণকালীন সময়েই বিভিন্ন আকর্ষণীয় পণ্য যেমন হাত ব্যাগ, ভ্যানিটি ব্যাগ, গহনার বাক্স, ওয়াল ম্যাট, টিস্যু বক্স, কলমদানী, হ্যাট, নারীদের বিভিন্ন ধরনের অলংকার ইত্যাদি তৈরি করছে।
এছাড়া এ জাতীয় কৃষিজ বর্জ্য থেকে প্রাকৃতিক আঁশ ও সূতা উৎপাদন করে পরিবেশসম্মত পোষাক ও হস্তশিল্প উৎপাদনের মাধ্যমে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, মূলত আনারস ও কলাগাছের আঁশ প্রকল্পের কাঁচাপণ্য হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মধুপুর গড়ে আনারসের পাশাপাশি প্রায় ১৫ হাজার একরে কলার বাণিজ্যিক আবাদ হয়। আনারস ও কলার বর্জ্য থেকে সূতা ও কাপড় তৈরির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির অপার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। আঁশ উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে করা গেলে বিদেশ থেকে সূতা আমদানি হ্রাস পাবে। গামের্ন্টস খাতে নতুন পোষাক তৈরিতে অনুসঙ্গ হিসাবে কাজ করবে। এমনকি এসব বর্জ্য থেকে জৈবিক সার তৈরি করে রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস করা যাবে।
প্রকল্পের মধুপুর ইউনিট ম্যানেজার এস. এম. আজাদ রহমান জানান, এটি শীঘ্রই সফল প্রকল্প হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। মধুপুর ছাড়াও নরসিংদী ও গাইবান্ধায় প্রায় দুই হাজার নারীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু হস্তশিল্প সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত ও বিপণন সহজতর হলে পিছিয়ে পড়া নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যাবে। তবে তার জন্য প্রয়োজন এই খাতের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা।