বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটের মোংলার একটি নিরীহ পরিবার যৌতুকলোভী ও প্রতারক জামাতার মামলার ফাঁদে পড়ে দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছে। যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি অর্থলোভী ওই জামাতা। একের পর মিথ্যা মামলা ঠুকে হয়রানি করে চলছে এ পরিবারটিকে। আর এ মামলার ঘানি টানছেন নারী-পুরুষসহ পরিবারের সবাই। এ ছাড়া আরও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অব্যাহত হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতারক স্বামীর খপ্পড়ে পড়া কলেজ ছাত্রী গৃহবধূ আয়েশা দিদ্দিকা তানিয়া শিশুকন্যাসহ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও তানিয়ার পারিবার জানায়, ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট সদর উপজেলার রাখালগাছি সুগন্ধি গ্রামের কবিরাজ আশ্রাফ ঢালীর পুত্র মোঃ আরিফুজ্জামানের সঙ্গে মোংলার বুড়িরডাঙ্গা গ্রামের মোঃ জাহিদুর রহমানের কন্যা কলেজ ছাত্রী তানিয়ার (২৩) বিয়ে হয়। মেয়ের বিয়েতে সাধ্যমত অনুষ্ঠানিকতাসহ জামাতাকে নগদ ৭৮ হাজার টাকার প্রাইজবন্ডসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার উপহার সামগ্রী ও মালামাল প্রদান করেন বলে জানান বাবা জাহিদুর রহমান।
এরপর নানা ফন্দিতে তানিয়ার বাবার কাছ থেকে জামাতা ও তার পরিবারের লোকজন আদায় করে নেয় আরও প্রায় ৫ লাখ টাকা। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করেই জামাতার সকল আবদার মেনে নেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাহিদুর রহমান। এরই মধ্যে এক কন্যা সন্তানের মা হন তানিয়া। গর্ভের অনাগত কন্যা সন্তানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর পুত্র সন্তানের প্রত্যাশায় নিজের নানা কবিরাজি তদ্বির শুরু করেন শশুড় গ্রাম্য কবিরাজ আশ্রাফ ঢালী। তাতেও কোন কাজ না হওয়ায় গর্ভে থাকা কন্যা সন্তান হত্যার ব্যর্থ চেষ্টায় কয়েক দফায় তানিয়ার ওপর শারিরীক নির্যাতন চালায় স্বামী, শশুড় ও পরিবারের লোকজন।
এক পর্যায়ে প্রাইভেট কার ক্রয়ের চাহিদা নিয়ে অসুস্থ তানিয়াকে পিত্রালয়ে পাঠানো হয়। সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য জটিলতা ও চিকিৎসার জন্য সে আশ্রয় নেয় খুলনায় মামা বাড়িতে। সেখানেই তার কন্যা সন্তান ভুমিষ্ট হলে খুশি হতে পারেনি শশুর কূলের স্বজনরা। পুত্র সন্তান প্রত্যাশী স্বামী, শশুড় ও পরিবারের অন্য সদস্যরা তানিয়ার মামা বাড়িতে গিয়ে তাকে মারধর করে। এ ছাড়া স্বামী আরিফুজ্জামান ঢালী তার কাছে যেতে হলে স্ত্রীকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে আসতে হবে অন্যথায় জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়। এর পর কিছুদিন যেতে না যেতেই লোক মারফত জানানো হয় তানিয়াকে ডিভোর্স দেয়া হয়েছে। আর যৌতুকলোভী স্বামী আরিফুজ্জামান অন্যত্র বিয়ে করেছে। পরে তানিয়ার পরিবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তাকে ডিভোর্স দেয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার কথা।
এ অবস্থায় স্বামী ও সন্তানের অধিকার ফিরে পেতে গত ২৭ মার্চ আদালতে মামলা দায়ের করে তানিয়া। প্রতারক স্বামী আরিফুজ্জামান মামলা থেকে রেহাই পেতে আদালত থেকে মিমাংসার মুচলেকায় জামিনের সুযোগ নিয়ে তানিয়ার পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ৭ আগস্ট আদালতে ৭ ধারা মামলা দায়ের করে। এরপর গত ১৬ আগস্ট আরিফুজ্জামানের ভগ্নিপতি মির্জা জিহাদুর রহমান বাদী হয়ে আদালতে তানিয়ার বাবা-মা ও চাচাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এর একদিন পর তার নিটক আত্মীয় শেখ আনিচুর রহমান বাদী হয়ে আদালতে ৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার আরেকটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। গত ৮ সেপ্টেম্বর তার চাচা মাহাতাব ঢালী বাদী হয়ে আদালতে আরেকটি ছিনতাই মামলা ঠুকে দেয়। এ ছাড়া কোনও মামলা ছাড়াই মোংলা থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে তানিয়ার বাবা জাহিদুর রহমানকে আটক করে ৫৪ ধারায় গত ৪ নভেম্বর আদালতে সোপর্দ করা হয়।
চলতি মাসে প্রতারক জামাতা তার নিকট আত্মীয়কে বাদী করে আদালতে আরও দুটি মামলা দায়ের করে। এছাড়া আরও মামলায় ফাঁসানোর অব্যাহত হুমকি দেয়া হচ্ছে। প্রতারক ও যৌতুকলোভী জামাতার একের পর এক মামলায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তানিয়ার পরিবার। ইতিমধ্যে মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন তানিয়ার বাবা ও চাচাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও। বর্তমানে একাধিক মামলার ঘানি টানতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন এ পরিবারটি।
তানিয়া জানান, তার শশুড় এলাকায় কথিত জ্বিনের বাদশা হিসেবে পরিচিত। আর জ্বিনের তদ্বির দিয়ে এবং সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ বাণিজ্য করে থাকে। আর এ অবৈধ অর্থের দাপটেই একের পর এক মামলা দিয়ে তার পরিবারকে হয়রানী করা হচ্ছে। বর্তমানে ১১ মাস বয়সের শিশুকন্যা নিয়ে তার মানবেতর দিন কাটছে। বাবা জাহিদুর রহমান জানান, জামাতার দফায় দফায় যৌতুক চাহিদা না মেটানোসহ জ্বিন তদ্বিরের ভন্ড ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়ে মেয়েকে নির্যাতন চালিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আবার উল্টো ফাঁসানো হচ্ছে একাধিক মিথ্যা মামলায়। আরিফুজ্জামান ঢালী হুমকি দিয়েছে তাদের সব স্তরের বড় বড় লোক আছে আমাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে পারবে না।
মোংলার বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি মেম্বর প্রদ্বীপ হালদার জানান, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে নিরীহ এ পরিবারটিকে হয়রানী করা হচ্ছে। মামলাবাজ এ প্রতারক চক্রের কবল থেকে রেহাই পেতে তানিয়ার পরিবার প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তবে আরিফুজ্জামান ঢালীসহ অভিযুক্তরা তাদের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।