রবিউল হাসান রবিন, কাউখালী (পিরোজপুর): পিরোজপুরের কাউখালীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেখে উপজেলার কচুয়াকাঠি গ্রামের হতদরিদ্র বিধবা গোলবানু বেগমের (৫৫) পাশে দাঁড়িয়েছেন পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সেখ। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক গোলবানুর বাড়িতে গিয়ে দুটি ছাগল, শাড়ি, কম্বল ও গোলবানুর প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য লুঙ্গি প্রদান করেন।
অসহায় গোলবানুর একমাত্র অবলম্বনের ছাগলটি উপজেলার পিরোজপুর-কাউখালী-স্বরূপকাঠি সড়কের কচুয়াকাঠি গ্রামের সড়কে গত শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকাল ৫টার দিকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যায়। গোলবানু তার একমাত্র সম্পদ হারিয়ে শোকে বিলাপ করছিলেন। পরে কাউখালীর সমাজসেবক আবদুল লতিফ খসরু গ্রামের বাড়ি থেকে উপজেলা সদরে ফেরার সময় হতদরিদ্র ওই বৃদ্ধাকে রক্তাক্ত মৃত ছাগলের পাশে বসে কাঁদতে দেখে মোবাইলে ছবি তুলে তার ফেইসবুকে ঘটনাটি পোস্ট দেন।
ফেইসবুকে স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছিলেন “সারাদিন ঘাস খাইয়া ঘরে ফিরছিল বাবায়। আহারে কোন পাষাণে মারল মোর বাবারে!’ হতদরিদ্র বিধবার এমন গগনবিদারী কান্না স্বজনহারা অসহায় মানুষের মতো। কাঁদছিল সে পথের ধারে। পাশে পড়েছিল বিধবা বৃদ্ধার অবলম্বন প্রিয় ছাগলের নিথর শরীর। গলা বিচ্ছিন্ন ছাগলের ছোপ ছোপ রক্তে ভিজেছে সড়ক। অজ্ঞাত কোনও মোটরসাইকেল চালকের বেপরোয়া চাকায় পিষ্ট হয়ে বৃদ্ধার অবলম্বনের ছাগলটি মারা পড়ে। প্রিয় ছাগলের এমন মৃত্যুতে বিধবা বৃদ্ধা স্বজনহারা মানুষের মত কাঁদছিলেন। পথচারীদের শান্তনায় বৃদ্ধার কান্না যেন থামছে না”
এই স্ট্যাটাসটি পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের নজরে আসলে তিনি মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সকালে বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে দুটি ছাগল সেই সাথে শাড়ি, লুঙ্গি আর শীতবস্ত্র প্রদান করেন।
এ সময় কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আহসান কবির, ইউএনও লাবনী চাকমা, সমাজসেবক আবদুল লতিফ খসরু ও স্থানীয় ইউপি সদস্য জেপি নেতা নেপালচন্দ্র দে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় মৃত ছাগলের শোক ভুলে গিয়ে বিধবা গোলবানু আনন্দে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তখন সেখানে আরেক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে।
বৃদ্ধা গোলবানু দিনমজুরি করে কোনমতে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটান। দিনমজুরির টাকায় অনেক কষ্টে গত একমাস আগে তিন হাজার টাকায় ছাগলটি কেনেন। প্রতিদিনের মতো রাস্তার পাশে ঘাস খেয়ে শনিবার বিকাল ৫টার দিকে অভ্যাসমতো বাড়ি ফিরছিল ছাগলটি। হঠাৎ একটি বেপরোয়া মোটরসাইকেলের চাকায় ছাগলটি পিষ্ট হলে গলা বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘটনস্থলেই ছাগলটি মারা যায়।
কাউখালীর কেউন্দিয়া গ্রামের সমাজ সেবক মো. আবদুল লতিফ খসরু জানান, তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে উপজেলা সদরে ফিরছিলেন। এ সময় তিনি হতদরিদ্র ওই বৃদ্ধাকে গলাবিচ্ছিন্ন রক্তাক্ত মৃত ছাগলের পাশে বসে বিলাপ করতে দেখে এগিয়ে যান। বৃদ্ধার কান্নায় তখন পথচারী ও স্থানীয়রা জড়ো হন। বৃদ্ধার কান্না দেখে তখন তিনি মোবাইলে ছবি তুলে বিষয়টি ফেইসবুকে পোস্ট দেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আসলে তিনি বিধবাকে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।