সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ‘আমি হিন্দু না, আমি মানুষ। আমি সব মানুষের ভোট পেয়ে নিবাচিত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। আমি মানুষের কোনোদিন ক্ষতি করিনি। তবে ওরা কেন টাকার জন্য আমার সোনামনি ছেলেটাকে এভাবে মার্ডার করলো। এখন আমি বুঝতে পারছি কেন হিন্দুরা ইন্ডিয়ায় যায়। আমি কোথাও যাব না। মানুষ দেখলো আমার সাথে কী করা হলো, এর বিচার নিশ্চয় মানুষ করবে।’ এভাবেই বলছিলেন দশ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে নিহত হওয়া কলেজ ছাত্র গৌতম সরকারের পিতা গণেশ সরকার। যিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আট নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য।
গণেশ সরকার জানান, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গৌতম ও তার বন্ধুরা বাড়ির পাশে মহাদেবনগর মোড়ে আমিন মিস্ত্রির দোকানে বসে টিভিতে ফুটবল খেলা দেখছিলো। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে ফোনে ডেকে নেয়। এরপর থেকে গৌতমের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি জানান, রাতে তার নম্বরে ছেলের নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয় ছেলেকে পেতে চাইলে তাকে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে।
এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচ জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন নুর ইসলাম, রেজাউল শেখ, আলিম, শাওন ও মনিরুল ইসলাম।
সাতক্ষীরা সীমান্ত কলেজের বিএ শ্রেণির ছাত্র গৌতম সরকারকে খুনের ঘটনায় হাজার হাজার উত্তেজিত জনতা অপহরণকারী নুর ইসলাম ও রেজাউল শেখের বাড়ি ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে গ্রামবাসীরা। ক্ষোভে ফেটে পড়া মানুষকে নিবৃত্ত করতে গণেশ মেম্বর নিজে অনুরোধ করেছেন বলে জানালেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফজলুর রহমান। চেয়ারম্যান ফজলু বলেন, এরকম ক্ষোভে ফেটে পড়া মানুষকে শান্ত করা সহজ ছিল না। কিন্ত তিনিও এসআই আবুল কালাম সাধারণ মানুষদের বুঝিয়ে শান্ত করেছেন। দুবৃত্তদের ঘরের আগুন নেভানো হয়েছে কিন্তু সাধারণ মানুষের মনে এখনও দাও দাও করে আগুন জ্বলছে।
গৌতমের বোন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী পিয়া রাণী সরকার জানান, তার ভাই অত্যন্ত শান্ত ও মিশুক স্বাভাবের ছিল। সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না তার ভাই নেই।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃত সাতক্ষীরার কলেজ ছাত্র গৌতম সরকারের (১৯) লাশ পাঁচ দিন পর উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মহাদেবনগর গ্রামের একটি পুকুর থেকে তার হাত-পা বাধা ও মুখে কসটেপ লাগানো অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।
গৌতমের মা সন্ধ্যা রাণীও স্বামী ও মেয়ের মতো নির্বাক হয়ে গেছেন। তার একটাই আকুতি, তিনি যেন তার সন্তান হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেন।