আব্দুল্লাহ আবু এহসান, মধুপুর (টাঙ্গাইল): মধুপুর গড় এলাকায় এক আদিবাসী গারো পরিবারের কলা ও আনারস বাগান কেটে সাবাড় করা হয়েছে। বিনষ্ট করা হয়েছে বাড়ন্ত কৃষি ফসল। এভাবে নির্বিচারে কলা, আনারস ও আম বাগান কেটে বিনষ্ট করায় এ আদিবাসী পরিবারটি হতাশ হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে এক ধাপ। সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের বন এলাকার গারো অধ্যুষিত পল্লী কাকড়াগুনী গ্রামে।
উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের কাকড়াগুনী গ্রামের আদিবাসী গারো কৃষক লাজারুস সিমসাং (৪৫) এর আবাদকৃত প্রায় ৩০ বিঘা জমির আনারস ও কলার বাগান কেটে সাবাড় করেছে বন বিভাগের লহুরিয়া বিটের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কমিউনিটি ফরেস্ট ওয়ার্কারের একটি দল। তার এই বিশাল বাগান কেটে ফেলায় এই পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দেড় বছর ধরে ধার ও দেনা করে বাগানের যতœ নেন পরিবারটি। অনেক যতেœর পর বেড়ে উঠে কলা, আনারস ও আমের গাছ। গাছ পরিপক্ক হয়। কলা আসার সময় হয়েছে সবেমাত্র। সেই মূহুর্তে এ বিশাল বাগানটি কেটে ফেলায় অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে গেল এ গারো পরিবারটি। এ সব তথ্য স্থানীয় কাকড়াগুনী গ্রামের অধিবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে মধুপুর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে অরণখোলা ইউনিয়নের বন এলাকার গারো অধ্যুষিত গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বনের পাশেই কলা, আনারস ও আমের বাগান কেটে ফেলার দৃশ্য। কেটে ফেলা কলা গাছগুলো পড়ে আছে। পাশের সরিষার ক্ষেতে লাগানো আনারসের চারাগুলো উঠানো। স্থানীয় গারো অধিবাসীরা অভিযোগ করে জানালেন, শুধু আমরা গারোরাই কি আনারস ও কলা চাষ করি? আর কেউ করে না? বনের চারপাশেইতো কলা আনারসের অনেক বাগান। ও সবতো কাটা হল না। আমরা আদিবাসী বলে আমাদের বাগান কেটে ফেলা হল। বিনষ্ট করা হল বিশাল আকারে গড়ে উঠা কৃষি ফসল। এই ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আদিবাসী গারো লাজারুস সিমসাং জানান, এই জমি আমি অনেক দিন ধরে ভোগ দখল করে খাচ্ছি। গত বছর এ ৩০-৪০ বিঘা জমিতে আনারস, কলা ও আমের বাগান গড়ে তুলি। ধারদেনা ও ঋণ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অতি কষ্টে বাগানের যতœ নেই। গাছ বেড়ে উঠেছে। ফল ধরার সময় হয়েছে এখন। ফসল বিক্রি করে আমি ঋণ পরিশোধ করে পরিবার পরিজন নিয়ে লাভের টাকা দিয়ে সংসার চালাব। এই মূহুর্তে বন বিভাগের লোকেরা বাগান কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। তার মতে ৩২শ কলা, ২০ হাজার আনারসের গাছ ও ৫শ আমের গাছ কাটা হয়েছে। তার ক্ষতি হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা। কি দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবে এ ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এই পরিবারটি। তিনি জানান, গাছ লাগানোর সময় যদি আমাকে বাধা দিত তাহলে গাছ লাগাতাম না। তখন তাকে বাধা দেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান। বন বিভাগের লোকেরা তার উপর আক্রোশে এ বাগান কেটে সাবাড় করেছে।
এ ব্যাপারে জয়েনশাহী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক জানান, বনের জমি যেই দখল করুক তা বন বিভাগের লোকদের যোগসাজেশ ছাড়া হয় না। এ ফসল কাটা ঠিক হয় নি। ফসল লাগানোর শুরুতে বাধা দিলেই হতো। এতে দেশেরও ক্ষতি হয়েছে এবং ঐ পরিবারেরও ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে বৃহত্তর ময়মনসিংহ আদিবাসী উন্নয়ন কাউন্সিলের সভাপতি আদিবাসী নেতা অজয় এ মৃ জানান, অর্জিত বাগানের কলা, আনারস বাগান কাটা অমানবিক। বন বিভাগ উচ্ছেদ করবে ভাল কথা। যখন চারা লাগালো তখন বাধা দিলেই হতো। অনেক টাকা শ্রম ঘাম দিয়ে গড়ে তোলা অর্জিত ফসল কেটে নষ্ট করা এটা অমানবিক।
এ ব্যাপারে সহকারী বন সংরক্ষক এমএ হাসান সাংবাদিকদের জানান, জবর দখলকৃত জায়গা আমরা উদ্ধার করেছি। গজারী গাছ কেটে এ জমি তৈরি করা হয়েছে। তাকে এ ব্যাপারে নিষেধ করলেও সে শোনেনি। বনের জমি উদ্ধার করা এটা বন বিভাগের দায়িত্ব।
মধুপুর থানার ওসি সফিকুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে বন বিভাগের পক্ষ থেকে থানায় মামলা হয়েছে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।