রবিউল হাসান রবিন, কাউখালী (পিরোজপুর): জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছার কারণে সদ্যসমাপ্ত জেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ভোটাররা যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দিয়ে উন্নয়নবান্ধব নেতৃত্ব নির্বাচনে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমান সরকার গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নে অনেক বেশি মনোযোগী। সরকারের মূলনীতি হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের পশ্চাদপদ এলাকার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া। তিনি মঙ্গলবার পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি গণসমাবেশে এসব বলেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, মানুষের উন্নয়ন চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে। গত ৩২ বছর জনগণের মাঝে নিরবচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে আমাদের উপলব্ধি হচ্ছে এক সময় দেশের প্রান্তিক জনগণের প্রত্যাশা ছিল খুবই সীমিত। খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান পেলেই তারা সন্তুষ্ট থাকতেন। এখন তারা বিদ্যুৎ চান, স্লুইজ গেট চান, কৃষির উন্নয়ন চান। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলে থাকেন তৃণমূল মানুষের উন্নয়নের জন্য তাদের সাথে গভীরভাবে মিশতে হবে। তাদের সুখ-দুঃখকে অনুভব করে সহানুভূতির সাথে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রয়োজন মেটাতে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট। এখন আর যমুনার ওপারে কৃষি উন্নয়নের আর জায়গা নেই। তাই আমাদের অঞ্চলে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপকে কাজে লাগাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মনে রাখতে হবে প্রকৃতির সাথে লড়াই নয় নদী ভাঙ্গনসহ অনিবার্য প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সাথে নিজেদের খাপ খাওয়ায়ে অভিযোজন প্রক্রিয়ায় জীবন ধারণ করতে শিখতে হবে। ১৭ বছর ধরে একাধিক সরকারের মন্ত্রীত্বের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস অতীতের চেয়ে বর্তমানে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের চেষ্টা অনেক গভীর ও কার্যকর। এখন আর আগেরমত চলার পথে মানুষকে ভিক্ষা করতে দেখা যায় না। দারিদ্রের হার অনেক কমে গিয়ে দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থানকারী মানুষের সংখ্যা এখন হাতে গোনা। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের নতুন বই নিয়ে দলে দলে স্কুলে যাওয়ার দৃশ্য মনকে প্রফুল্ল করে।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, গ্রামের মানুষ সরাসরি বিদ্যুৎ পেতে শুরু করেছে, আগামী জুন মাসের মধ্যে ভান্ডারিয়ার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাবে এবং এক বছরের মধ্যে কাউখালীর মানুষও সবাই বিদ্যুৎ পাবেন। সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে দুর্গম এলাকায়ও আলো পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে উন্নয়নের স্বাদ পেতে হলে সকলের ঝগড়া-ফ্যাসাদ, বিবাদ-বিসম্বাদ থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় অন্য এলাকার চেয়ে পুলিশকে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় অনেক কম পরিশ্রম করতে হয়। এর কারণ এলাকার মানুষ এক হয়ে সম্মিলিতভাবে বসবাস করেন। এটা সম্ভব হয়েছে উন্নয়নের স্বার্থে আমরা কখনো এলাকার মানুষের সামনে রাজনীতির কথা না বলায়। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, এলাকাবাসী যাতে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে তার জন্য সবর্দা সচেষ্ট ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ হিসাবে সদ্যসমাপ্ত জেলা পরিষদ নির্বাচন আমাদের অঞ্চলে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ও পুলিশসহ এলাকার ভোটাররা অভূতপূর্ব দায়িত্বের পরিচয় দিয়েছেন। যার ফলে আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী জেলা পরিষদে উন্নয়নবান্ধব নেতৃত্ব পেয়েছি। যাদের দ্বারা মানুষের উপকার হয় তাদেরকেই ভোটাররা নির্বাচিত করেছেন বলে আমার বিশ্বাস। নানা ধরনের হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে তৃণমূলের স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা দৃঢ়তার সাথে যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার পরিবেশ নিশ্চিত করায় মন্ত্রী প্রশাসন, পুলিশ ও ভোটারদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, আমরা কখনো স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করি না, সম্পদ ও বরাদ্দ বিলি-বন্টনের ক্ষেত্রে হুকুম জারি করি না। কারণ আমরাই দেশে উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ গঠন করেছি এবং আমাদের সহায়তায় এ পদ্ধতি বাস্তবায়িত হয়েছে। তাই আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে স্থানীয় সরকার পদ্ধতিকে স্থায়ীত্বশীল করা।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মঙ্গলবার বিকালে কাউখালী উপজেলার সয়না-রঘুনাথপুর ইউনিয়নের দ্বীপ গ্রাম ধাবরিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সুইচ টিপে এই গ্রামটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও আলো প্রজ্জলন করেন। ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মিয়া মনুর সভাপতিত্বে এখানে মন্ত্রী এক স্বতঃস্ফুর্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। এর আগে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী কাউখালী উপজেলা সদরে মুজিব চত্বরে বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী ও সরকারি অনুদান বিতরণ অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সদর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রশীদ মিল্টনও এখানে বক্তৃতা করেন।
দুপুরে মন্ত্রী কাউখালীতে নবনির্মিত গান্ডতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারের উদ্বোধন করেন। এখানে ফলক উন্মোচন শেষে তিনি দোয়া ও মোনাজাতে শরিক হন। বিদ্যালয় ব্যবস্থপনা পরিষদের সভাপতি মীর মনির হোসেন মিরাজের সভাপতিত্বে এখানে মন্ত্রী এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। এসব কর্মসূচিতে মন্ত্রীর সাথে ছিলেন পিরোজপুর জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ, কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আহসান কবির, ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম তালুকদার উজ্জল, কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার লাবনী চাকমা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মিঠু, ভান্ডারিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ, কাউখালী উপজেলা জেপি’র সভাপতি মাহবুবুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম নসু প্রমুখ।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রীর উপস্থিতিতে কাউখালী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করা হয়। সরকারি ত্রাণ তহবিল থেকে অসহায়, হতদরিদ্র ও দুঃস্থদের মাঝে ভিজিএফ’র চাল ঢেউ টিন ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়। এছাড়া আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত দুঃস্থ কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে এ সব স্থানে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। এ সব বিতরণ অনুষ্ঠানে আমরাজুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা চাঁন, চিড়াপাড়া-পার সাতুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ খান খোকন, শিয়ালাকাঠি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সিকদারসহ সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন। দুঃস্থ কল্যাণ সংস্থার কম্বল বিতরণ কার্যক্রম তদারকি করেন সংগঠনের উপদেষ্টা এম এ রব্বানী ফিরোজ।