রহিমের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ ঝাউডাঙ্গা, মায়ের আহাজারি

আমিনা বিলকিস ময়না, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নেন আব্দুর রহিম। ১৯৮৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভোরে আব্দুল মাজেদ ও রওশন আরা দম্পতির ঘর আলো করে আসেন রহিম। ঝাউডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাইস্কুল থেকে লেখাপড়া শেষে কলারোয়া সরকারি ভর্তি হন তিনি।

রহিমের সন্তান ফারাবি (বাঁয়ে)। ডানের ছবিটিতে রহিম।

সংসার চালাতে বাবার কষ্ট দেখে রহিম একদিন মাকে বলেছিলেন,  মা একটা কাজ খুঁজতে সাতক্ষীরা যাব। মা রওশন আরা প্রতিবেশীর কাছে ঘরের ঝুড়ি বিক্রি করে সাতক্ষীরা পথ খরচা যোগাড় করে দেন। সেদিন গভীর রাতে বাড়ি ফিরে এসেই রহিম মাকে বলেন ‘মা অনেক খিদে লেগেছে, খেতে দাও।’ জানালেন, সেনাবাহিনীতে তার একটা চাকরি হয়েছে। দেশের জন্য কাজ করবেন তিনি। সংসারে আর অভাব থাকবে না মাকে এরকম আশ্বাসও দেন রহিম।

সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর রহিম প্রথমে কুমিল্লা সেনানিবাসে ও পরে ঢাকা সেনানিবাসে যুক্ত হন। পরে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে যোগ দিয়ে চলে যান সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে।

আফ্রিকা থেকে মাকে ফোন করতেন রহিম। মা-বাবার সঙ্গে, স্ত্রীর সঙ্গে  নিয়মিত কথা বলতেন। পাঁচ মাস আগে তার সন্তান ফারাবির জন্ম হয়।

বৃহস্পতিবার আফ্রিকার দেশটিতে দায়িত্বরত অবস্থায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মারা যান রহিম। এ সংবাদে এখন কাঁদছেন তার বাবা-মা-স্ত্রী। কাঁদছে পুরো গ্রাম।

রহিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার স্ত্রী বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। মা রওশন আরার আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। পাড়া-পড়শীরাও তার জন্য চোখের জল ফেলছেন।

প্রতিবেশী ও নিকট আত্মীয় ইব্রাহিম হোসেন মিঠু বলেন, রহিমের মতো একজন নির্ভীক সৎ ছেলেকে হারিয়ে পুরো গ্রাম শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.