সরকারের খাদ্য বিভাগের ধান চাল সংগ্রহ অভিযান শুরুর পর থেকে বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি এবং গত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও চলতি বছরের শুরুতে বাজার ফের অস্থির হয়ে উঠে। অথচ আমান মৌসুম শেষে বাজারে নতুন চাল আসায় এই সময়ে চালের দাম কমার কথা ছিল। আড়দতার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি উত্তরবঙ্গের মিল মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ছে।
ক্যাব অনুসন্ধানে দেখা যায় মোটা চালের দাম বস্তাপ্রতি চারশ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। ৫ মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। একই সাথে সিদ্ধ চালের দামও অতিরিক্ত বেড়েছে। একই সাথে চিকন চালসহ সব ধরনের চালের দাম বস্তা প্রতি ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। অন্যদিকে আটার দাম আর্ন্তজাতিক বাজারে সর্বনিম্ন হওয়ায় এবং দেশে প্রচুর মাঝারী ও নিম্নমানের গম আমদানি হওয়া সত্বেও ময়দার দাম হঠাৎ করে বস্তা প্রতি ৩৫০-৪৫০ টাকা বেড়েছে। আর কেজি প্রতি ৮-১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
আর্ন্তজাতিক বাজারে গমের মূল্য নিম্নমূখী হলেও দেশে দামবৃদ্ধির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে চালের বাজার ও ময়দার বাজার তদারকিতে মাঠ পর্যায়ে কঠোর নজরদারি বাড়ানোর দাবি করেছে দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষনকারী প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এক বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, যখনই কোন পণ্যের চাহিদা বাড়ে তখনই একশ্রেণির ব্যবসায়ী কৃত্রিম সরবরাহ সংকট তৈরি করে বাজারে দামবৃদ্ধির পাঁয়তারা করেন। সরকারের নিয়মিত নজরদারির অভাবে তারা নানা অজুহাতে এই মূল্যসন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পরবর্তীকালে দান খয়রাতের জন্য সিএসআর করেন, মাঝে মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণতহবিলেও বিপুল পরিমান দান করে থাকেন। আর প্রশাসন সরকারের কোন নির্দেশনা আসেনি এ অজুহাতে নিস্ক্রিয় থাকে। আর এ ফাঁকে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী আখের গুটিয়ে নেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে নিয়মিত বাজার তদারকি যেরকম জোরদার করা প্রয়োজন, তেমনি টিসিবির ডিলারদের কার্যক্রম বছরব্যাপী জোরদার করা দরকার। খাদ্য বিভাগের খোলা বাজারে চালবিক্রি,ওএমএস কার্যক্রমও নিয়মিত করা দরকার। একই সাথে সরকারের এ সমস্ত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিগুলি মাঠ পর্যায়ে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা না হলে হতদরিদ্রের জন্য ১০টাকায় চাল বিক্রি নিয়ে যা লংকাকান্ড হয়েছে সেরকম হযবরল হতে পারে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, চট্টগ্রামে মোটা আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১৬০০ টাকা দরে। গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বিক্রি হয়েছিল এক হাজার থেকে ১২ শ টাকায়। মোটা সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০-১৭০০ টাকা দরে। গত বছরের আগস্ট মাসের শুরুতে তা ৮শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। স্বর্ণা সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ১৭৫০ টাকা দরে। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বিক্রি হয়েছিল ১৩০০ ও ১৫০০ টাকা দরে। পাইজাম সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ টাকা দরে। গত আগস্ট মাসে বিক্রি হয়েছিল ১৩০০ টাকায়। বেতি আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকায়। গত আগস্ট মাসে বিক্রি হয়েছিল ১২শ টাকা দরে। মোটা আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা দরে। যা ছিল ১০০০ টাকা। বাজারে সরকারের কোন নজরদারি না থাকায় ব্যবসায়ীরা এ রকম লংকাকাণ্ড ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরো অভিযোগ করে বলেন, যখনই কোন পণ্যের দাম বাড়ে ব্যবসায়ীরা তখন দায়ভার অন্যের উপর চাপায়। চালের দামবৃদ্ধি নিয়েও তারা উত্তরবঙ্গের চালের আড়ত ও মিলারদের উপর চাপালেও দাম যখন কমে যায় তখন তারা বলেন বেশি দামে কেনা। তাই ব্যবসায়ীদের নীতি নৈতিকতা ও ব্যবসায় সুশাসন নিশ্চিত করতে চেম্বার, এফবিসিসিআইসহ ট্রেডবডিগুলির অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করে বলেন ট্রেডবডিগুলি শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের সাথে দেন দরবার করলেও ভোক্তাদের স্বার্থ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করছে না, অথচ তারাও কোন না কোন পণ্যের ক্রেতা। তারা এটা কোন সময় ভাবছে না আজ ভোক্তারা আছে বলেই তাদের ব্যবসার বিস্তার লাভ করছে। যদি ভোক্তারা মরে যায় তাহলে তাদের ব্যবসাও গুটাতে বাধ্য হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ক্যাবকেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি।