বাগেরহাট প্রতিনিধি: গলদা চিংড়ির দাম কমে যাওয়ায় চিংড়ি চাষে ‘ছোট কুয়েত’ খ্যাত বাগেরহাটের চিতলমারী, মোল্লাহাট ও ফকিরহাট উপজেলার কয়েক হাজার চিংড়ি চাষি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অধিক মূল্যে মাছের পোনা ও খাবার ক্রয় করে চিংড়ি চাষ করে এখন বিক্রির সময় দাম কম থাকায় চাষিরা তাদের খরচের টাকাও তুলতে পারছেন না। এ অবস্থায় এলাকার চিংড়ি চাষিরা চরম বিপাকে পড়েছেন। হতাশ হাজার হাজার চাষি গলদা চিংড়ি চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন।
সরেজমিনে চিতলমারী সদর বাজার, বাখেরগঞ্জ বাজার, ডুমুরিয়া বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার মৎস্য আড়ৎ, চিংড়ির ডিপো ঘুরে দেখা গেছে, ছোট আকারের গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৪শ টাকা, মাঝারি ৬শ টাকা ও বড় আকারের চিংড়ি প্রতি কেজি ৭শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বিভিন্ন খোলা বাজারেও কম মূল্যে প্রচুর পরিমানে চিংড়ি পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় দুই মাসের অধিক সময় ধরে চিংড়ির দাম কম থাকায় দেনার দায়ে বাধ্য হয়ে চাষিরা নামমাত্র মূল্য চিংড়ি বিক্রি করছেন।
উপজেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, চিতলমারী সদর, বড়বাড়িয়া, কলাতলা, হিজলা, শিবপুর, চরবানিয়ারীসহ সাত ইউনিয়নে চলতি বছরে ৬ হাজার ৮শ পনের হেক্টর মৎস্য ঘেরে সাড়ে ৭ হাজার মৎস্য চাষি চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষ করেন। চিংড়ি চাষের সাথে চিতলমারী, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিকটন চিংড়ি উৎপাদিত হয়।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ পরিবার মৎস্য ঘেরে চিংড়ি চাষের উপর নির্ভরশীল। গত বছর জুন মাসের ভয়াবহ বন্যা ও ঝড়ে এলাকায় প্রায় শতভাগ চিংড়ি চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আগেই গলদা চিংড়ির বড় ধরনের দর পতনে এলাকার হাজার হাজার চিংড়ি চাষির মরণদশা দেখা দিয়েছে। এখানকার অধিকাংশ চাষি বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, দাদন ব্যবাসায়ী ও সুদেকারবারিদের কাছ থেকে অধিক সুদে টাকা এনে বেশি দামে মাছের পোনা ও মাছের ফিড ক্রয় করে চাষাবাদে ব্যয় করেছেন। এ পরিস্থিতিতে চিংড়ির বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় তারা খরচের টাকাও ঘরে তুলতে পারছেন না। দেনার দায়ে জর্জরিত এসব চাষিরা ঘুরে দাঁড়ানোর মতো কোন পথ দেখছেন না।
চরবানিয়ারী ইউনিয়নের শ্যামপাড়া গ্রামের চিংড়ি চাষি দিজেন গাইন, স্বপন মন্ডল, সুমন মীর, সদর ইউনিয়নের রায় গ্রামের বিনয় সিংহ, পাড়ডুুমুরিয়া গ্রামের লতিফ শেখ, কবির শেখ, হেমায়েত সরদারসহ অনেকে হতাশা ব্যক্ত করে জানান, বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও ও সুদে কারবারিদের কাছ থেকে অধিক সুদে টাকা এনে তারা চিংড়ির চাষ করেছেন। কিন্তু চিংড়ির দাম কম থাকায় তারা উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেননা।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, কিছু অসাধু চাষি গলদা চিংড়ির খাবার হিসেবে পোল্ট্রি ফিড ব্যবহার করায় সম্প্রতি গলদা চিংড়িতে এন্ট্রিবায়োটিক পাওয়া গেছে। ফলে আমদানিকারক দেশ দুটি চালান মাছ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কারণে মাছের দরপতন ঘটে। তাছাড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণেও মাছের বাজার দর কম রয়েছে।