মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): নদী ও পানির অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশে এখনও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়নি। আইনি সীমাবদ্ধতা, সাধারণ মানুষের মতামতকে কম গুরুত্ব দেওয়ার কারণে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন পানি ও নদী বিশেষজ্ঞরা। বুধবার কুয়াকাটায় শুরু হওয়া ‘জল ও জনতন্ত্র’ সম্মেলনে তারা আরো বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে দেশে পানি সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, দখল ও দূষণ বাড়ছে। এতে বাংলাদেশ আঞ্চলিকভাবে পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, নদীর অধিকার না-থাকা মানে নদীকে মেরে ফেলা। ভোট দেওয়ার মতো পানি পাবার অধিকারও মানুষের রয়েছে। তাই পানি বিষয়ে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশের পরিচালক ফারাহ্ কবির বলেন, বাংলাদেশে যত উন্নয়ন বা উন্নয়ন চিন্তা হয়েছে, তার পুরোটাই জমিকেন্দ্রিক। উন্নয়ন ভাবনায় পানি কিংবা নদীর গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে নদী মরে যাচ্ছে, ভাঙছে, হারিয়ে যাচ্ছে। সমস্যায় পড়ছেন নদীপাড়ের মানুষ। প্রভাব পড়ছে গ্রাম থেকে শহরে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, সমস্যার সমাধানের জন্য যদি সঠিক তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করতে না পারি তাহলে নীতি-নির্ধারকদের কাছে গুরুত্ব পাওয়া যাবে না। সমস্যার সমাধান আসা উচিত প্রান্তিক মানুষের কাছ থেকেই। কারণ তারাই নদী ও পানি নিয়ে সবচেয়ে বেশি জানে। তিনি পানি ব্যবস্থাপনায় নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্রেখ করে বলেন, নারীদের কাছে পানি নিয়ে অনেক চিন্তাশীল ও বাস্তব জ্ঞান আছে। স্থানীয় পর্যায়ের জ্ঞান সঠিক পর্যায়ে কাজে লাগাতে পারলে আমরা ভালো ফল পাব।
দুই দিনের এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনীপর্বে ‘জল ও জনতন্ত্র’ নিয়ে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন একশনএইড বাংলাদেশের ম্যানেজার শমসের আলী। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং বাংলাদেশে ‘মানুষ ও পানির অধিকার’ নিয়ে একটি গবেষণার ফলাফলও তুলে ধরেন তিনি। গবেষণায় বলা হয়- বাংলাদেশের নদীপাড়ের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন এখানকার পানি ও নদী নিয়ে সমস্যার মূল কারণ ভারত। নদী ও পানি বিষয়ে নদীতীরের বাসিন্দাদের ধারণা সুস্পষ্ট নয় বলেও গবেষণায় উঠে আসে।
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার পানির সুশাসন বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ এর শিক্ষক মেহেরুন্নেসা। তিনি বলেন, আমরা সব সময় সরকার ও ভারতের দোষ দেই। কিন্তু নদী ও পানি পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা সঠিকভাবে জানি না। নদীদূষণের জন্য আমরা কতটুকু দায়ী তা বুঝতে চাই না। তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।’
পানির অধিকার নিয়ে নেপালের মহিলা অধিকার মঞ্চ এর উপদেষ্টা সাবিত্রি পোখারেল বলেন, অধিকার খুবই গভীর একটি বিষয়। পানি অধিকারের বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃদেশীয় সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে সাধারণ মানুষদের সম্পৃক্ত করতে হবে’।
বৃহস্পতিবার সম্মেলনে পানির অধিকার রক্ষায় একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে।