প্রতিশ্রুতিতেই থেকে গেছে ঈশ্বরদী জংশনের আধুনিকায়ন

স্বপন কুমার কুন্ডু, ঈশ্বরদী (পাবনা): পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বৃহত্তম ঈশ্বরদী জংশনকে আধুনিক করার প্রতিশ্রুতি দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন হয়নি।

নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঈশ্বরদীর জংশন স্টেশনকে আধুনিকায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

এর আগে চারদলীয় সরকারের সময়েও ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই জংশন স্টেশন ও রেলওয়ে ইয়ার্ড উন্নয়নের পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা আর এগোয়নি।

পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বিষয়টি একাধিকবার উপস্থাপন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈশ্বরদী জংশনটি রি-মডেলিংয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে সে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

প্রায় ১০০ বছর আগে এ জংশন স্টেশনের নির্মাণ সম্পন্ন হয়। এখানে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ইয়ার্ড ও স্টেশনে ১৭টি রেললাইন রয়েছে। ঈশ্বরদী থেকেই মূলত দেশের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের রেল যোগযোগের বিস্তৃতি ঘটে। তবে এর আধুনিকায়নের জন্য কখনোই উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

বর্তমানে এই স্টেশনের উপর দিয়ে ২৪ ঘন্টায় ২৮টি যাত্রীবাহী  ও ১২টি মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। এগুলোর মধ্যে ১৭টি আন্তঃনগর, ৬টি মেইল ট্রেন ও ৭টি লোকাল ট্রেন।

চার প্ল্যাটফর্ম বিশিষ্ট জংশন স্টেশনটি পরিচালনার জন্য বর্তমানে ১৯টি বিভাগে প্রায় আড়াই হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। প্রতি ২৪ ঘন্টায় এই স্টেশনে দুই থেকে তিন হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করে। এখানে বিশ্রামাগার, টয়লেট ও ফুটপাথ দখল করে থাকে হকার, চোরাকারবারি ও বখাটেরা। বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যা সব সময়ই রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সদস্যরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না।

একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ঈশ্বরদী স্টেশন ইয়ার্ড মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের দখলে থাকে বেশিরভাগ সময়। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত কিছু সদস্যের সহযোগিতা পায় এরা। এছাড়াও বিভিন্ন ট্রেনে এই ইয়ার্ড থেকে চোরাই পণ্য ও মাদকদ্রব্য চালান হয় বিভিন্ন জেলায়। বিষয়গুলো রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পরও বিভিন্ন বিভাগের সাথে সমন্বয়হীনতার কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

টিকেট বিক্রির কাউন্টার সংলগ্ন টেম্পোস্ট্যান্ড, মালগুদাম, আইডব্লিউ অফিস, সাউথ কেবিন এলাকা, পিডব্লিউআই অফিস এলাকা, কলাবাগান এলাকা ও লোকোশেড এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে অনেকটা খোলামেলাভাবেই মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল ও হেরোইন বিক্রি হচ্ছে।

ঈশ্বরদী জংশনটিকে ঘিরে প্রায় ৯০০ রেলওয়ে বাসা রয়েছে। সম্প্রতি বাসাগুলোর বেশিরভাগই ড্যামেজড ঘোষণা করা হয়েছে। এসব ড্যামেজড বাসাগুলো দেখাশোনার দায়িত্ব আইডব্লিউ অফিসের। রেল কর্মচারীরা এসব বাসায় বসবাস না করলেও অবৈধ দখলদারদের কাছ হতে মাসিক ভাড়া আদায় করা হয় বলে ভাড়াটেদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এই আদায়কৃত ভাড়ার টাকা রেল কর্তৃপক্ষের তহবিলে জমা  হয় না। এসব বাসায় অবাধে চলে মাদক ও চোরাচালান ব্যবসা। ঈশ্বরদী রেল জংশন, স্টেশন ও ইয়ার্ড থেকে বৈধভাবে রেল কর্তৃপক্ষের কোটি কোটি টাকা আয় হলেও যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.