স্বপন কুমার কুন্ডু, ঈশ্বরদী (পাবনা): ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের দখলে থাকা প্রায় সোয়া একর জমি প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়ার একদিন পর কলেজের শিক্ষার্থীরা জমি ফিরে পেতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন এবং কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ করেছে।
৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে আইনি লড়াই শেষে সোমবার মালিকদের জমির দখল নিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী পাবনা জেলা প্রশাসকের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিল মাহমুদ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিপুল কুমার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিমুল আক্তার কলেজের সামনে অবস্থিত ১.২৭ একর জমি প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য ছাড়াও বহু স্থানীয় মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তবে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে কলেজের কোনো প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি।
দখল বুঝিয়ে দেওয়ার সময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা সীমানা পিলার এবং মালিকানার সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিলেও মঙ্গলবার সেগুলো গায়েব হয়ে যায়।
কলেজের পক্ষ থেকে জমি মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়ার সময় কেউ আপত্তি না তুললেও পরে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। কলেজের সম্মুখভাগের জমিতে অন্য স্থাপনা তৈরি হলে তা কলেজের সৌন্দর্যহানি ঘটাতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। মঙ্গলবার তারা বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে। শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে এসে পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও ওসির বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। তারা রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে।
জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ঈশ্বরদীর এই কলেজটি ১৯৮৬ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। কলেজে বর্তমানে নয় হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কলেজটিতে ১২টি বিষয়ে সম্মান কোর্স চালু রয়েছে।
জমির চার মালিকের একজন গোলাম মহিউদ্দিন জানান, ১৯৬০ সালে তারা জনৈক রাবেয়া খাতুনের কাছ থেকে এ জমি কেনেন। নিয়মমাফিক খাজনা দিয়ে তারা জমি ভোগ-দখল করতে থাকেন। কিন্তু ১৯৮০ সালে ঈশ্বরদী ভূমি অফিস এ সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত করে। এতে আর তারা খাজনা দিতে পারেননি।
এ ঘটনায় জমির মালিকরা আইনের আশ্রয় নেন। সম্পত্তির রেকর্ড সংশোধনের মামলায় ১৯৯৪ সালে তাদের পক্ষে নিম্ন আদালত রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের করা আপিল খারিজ করে দেন জজকোর্ট।
সম্পত্তি নিয়ে মামলা চলমান থাকলেও ১৯৯০ সালে জেলা প্রশাসন জমিটি ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের অনুকূলে লিজ দেয়। ১৯৯৭ সালে লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
গোলাম মহিউদ্দিন আরো জানান, ১৯৯৬ সালে জজকোর্টের রায়ের পর এডিসি (রাজস্ব) হালনাগাদ খাজনা গ্রহণের আদেশ দিলে তারা নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করেন। কিন্তু জমির দখল পাননি। পরে সরকার অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্ত করার পরিপত্র জারি করলে তারা তাদের সম্পত্তি দখলমুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানালেও জেলা প্রশাসক কোনো পদক্ষেপ নেননি। পরে তারা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন।
হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর জেলা প্রশাসককে মালিকদের কাছে সম্পত্তি দখল বুঝিয়ে দেওয়ার আদেশ দিলেও এ আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি। এ নিয়ে মালিকরা হাইকোর্টের কাছে আদেশ প্রতিপালন না করার অভিযোগ করলে হাইকোর্ট জেলা প্রশাসককে স্বশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসক এ জন্য এক মাস সময় প্রার্থনা করেন। সোমবার জেলা প্রশাসন মালিকদের সম্পত্তির দখল বুঝিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, দখল হস্তান্তরের বিষয়ে আমাকে প্রশাসনের পক্ষ হতে জানানো হয়নি। যে কারণে আমরা এ সময় উপস্থিত ছিলাম না। তিনি এ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান। মঙ্গলবার তারা আদালতে যেতে পারেন।
অধ্যক্ষের দাবি সত্য নয় উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিল মাহমুদ বলেন, কলেজের দখলে থাকা জমি হাইকোর্টের নির্দেশক্রমে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে একাধিকবার অধ্যক্ষকে জানানো হয়েছে।
জমির মালিকরা জানান,৩৫ বছর ধরে মামলা চালানোর পর আজ নিজেদের জমির দখল পেলাম এটাই আমাদের স্বস্তি। যদি কলেজের স্বার্থে জমিটির প্রয়োজন হয়, তবে সেটা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হতে হবে বলে উল্লেখ করেন তারা।