চুরি না হত্যা? করমজলের ৪৩ কুমিরছানা অন্তর্ধান নিয়ে বিরাট রহস্য

জাহিবা হোসাইন, মোংলা: সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্র থেকে উধাও হয়ে যাওয়া ৪৩টি কুমিরছানা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধে উঠছে। বন বিভাগ কুমিরছানাগুলোকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে। অন্যদিকে পুলিশ বলছে কুমিরছানাগুলো চুরি বা পাচার হয়ে গেছে।

বন বিভাগ কুমিরছানা ‘হত্যার’ দায়ে এক কর্মচারীকে বরখাস্ত ও আরেক কর্মচারীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে। তবে বন বিভাগের তদন্ত কমিটি এসব কর্মচারীর সঙ্গে কোনো কথাই বলেনি। বন বিভাগ ৪৩টি কুমিরছানার মধ্যে ৯টির খণ্ডিতাংশ উদ্ধার করারও দাবি করেছে।

পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা  শুক্রবার দুপুরে বলছেন, কুমিরের বাচ্চাগুলো চুরি হয়ে গেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে তারা নিশ্চিত হয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি রাতে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের দুটি কৃত্রিম পুকুর থেকে দুই দফায় ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা উধাও হয়ে যায়। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি পরদিন কেন্দ্রের কর্মচারী জাকির হোসেন ও মাহবুবুল আলমকে দোষী সাব্যস্ত করে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, পরিকল্পিতভাবে ওই দুজন কুমিরগুলোকে হত্যা করেছে।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম এ প্রতিবেদন পাওয়ার পর মাহবুবুল আলমকে বরখাস্ত ও জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় ডায়েরি করার জন্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বৃহস্পতিবার খুলনার দাকোপ থানায় জাকিরের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। মাহবুবুল আলমকেও বৃহস্পতিবার বরখাস্ত করা হয়।

ডায়েরির প্রেক্ষিতে শুক্রবার দুপুরে ঘটনার তদন্তে আসেন দাকোপ থানার এস আই ওমর ফারুক। তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক তদন্তে কুমিরের বাচ্চাগুলো চুরি হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন তিনি। চুরির সঙ্গে কেন্দ্রের কর্মচারীরা জড়িত থাকতে পারে বলে তার ধারণা। পুলিশ বন বিভাগকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছে। মামলা হলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, পরপর দুইদিন ধরে কুমিরের বাচ্চাগুলোকে নাশকতামূলকভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে প্রথম দিন পুকুরের আশপাশে কোনো কুমিরের মৃতদেহ কিংবা রক্ত-মাংসের চিহ্ন দেখা যায়নি। পরদিন তারা পুকুরের আশপাশে ৯টি কুমিরছানার ছড়ানো-ছিটানো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখতে পান বলে দাবি করেন। ওই কর্মকর্তার দাবি- জাকির আর মাহবুবই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন । তিনি আরো বলেন, মাহবুব ও জাকির বিভিন্ন সময়ে তার কাছে অন্যায় আবদার করেছেন। বেআইনি আবদার পূরণ না করায় আমাকে ফাঁসানোর জন্য কুমিরের বাচ্চাগুলো হত্যা করেন তারা।

কুমিরছানা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে নতুন করে গঠিত তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের প্রধান চাদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেদীজজামান বলেন, প্রথমবার গঠিত তদন্ত রিপোর্ট তিনি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলামের কাছে জমা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে আবারো আমাকে প্রধান করে তিনি আরেকটি কমিটি করে দিয়েছেন। রোববার তিনি প্রতিবেদন জমা দিবেন। তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক তদন্তে কেন্দ্রের কর্মচারী মাহবুবুল আলম ও জাকির হোসেন কুমিরের বাচ্চাগুলো হত্যা করেছেন বলে বিভিন্নভাবে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। অভিযুক্ত এ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ না করলেও তারা যে এ ঘটনা ঘটিয়েছে আমি সেই নমুনা পেয়েগেছি। চুরি, পাচার কিংবা হত্যা করা কুমিরগুলো জীবিত বা মৃত উদ্ধার করা সম্ভব কি না সে বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

অভিযুক্ত মাহবুবুল আলম ও জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের ফোনগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.